#অ্যাপেন্ডিসাইটিস
মানুষের বৃহদন্ত্রের( সিকামের নিচে) সঙ্গে লাগানো চিকন নলের মতো একটি সরু থলের নাম অ্যাপেন্ডিক্স। এটি সাধারণত লম্বায় ২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি থাকে সাধারণত তলপেটের ডান দিকে। তবে ম্যালরোটেশন থাকলে পেটের অন্য অংশেও থাকতে পারে। ছোট্ট এই থলেতে আকস্মিক প্রদাহ হলে দেখা দেয় অসহনীয় ব্যথা। এর নাম অ্যাপেন্ডিসাইটিস। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তা খুব মারাত্মক হয়। এ সময় শিশুরা খুব কান্নাকাটি করে। এ ধরনের ব্যথার উপসর্গ ও করণীয় সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে জটিলতা এড়ানো যায়। অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো পেটের ইমারজেন্সি সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১)
অ্যাপেন্ডিক্স এর নল কোন কারনে বন্ধ হয়ে গেলে। সাধারণত শক্ত মল দিয়ে এটা
বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো পেটের কৃমি গিয়েও নল বন্ধ করে দিতে পারে।
২) যারা বেশি ফাস্টফুড খায় এবং যাদের খাবারে শাকসবজি, ফলমূল কম থাকে তাদের বেশি হয়।
৩) সালমোনিলা বা স্যিগেলা দিয়ে ইনফেকশন হলেও হতে পারে।
কিভাবে হয়?
অ্যাপেন্ডিক্স
এর নল মল দিয়ে বন্ধ হয়ে গেলে এর পরের অংশ মোটা হয়ে ফুলে যার। ফলে এখানে
রক্ত চলাচল কমতে থাকে। রক্ত চলাচল কমে গেলে অ্যাপেন্ডিক্স এর মাথা সাধারণত
ফুটো হয়ে যায়। অ্যাপেন্ডিক্স এর মাথা ফুটো হয়ে গেলে মলের জীবাণু গুলো পেটে
ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সেখানে পুজ জমা হয়। তখন পেরিটোন্যাইটিস শুরু হয় এবং রুগির
অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কখনো কখনো অ্যাপেন্ডিকুলার লাম্প হতে পারে।
সাধারণত বাচ্চাদের খুব দ্রুত অ্যাপেন্ডিক্স এর মাথা ফুটো হয়ে যায়। দেখা
গেছে ১ দিন পার হওয়ার পরই এই সমস্যা তৈরী হচ্ছে যেখানে বড়দের ৩-৪ দিন সময়
লাগে অ্যাপেন্ডিক্স ফুটো হয়ে পেরিটোনাইটিস আরম্ভ হতে।
রুগি যে সমস্যা নিয়ে আসে:
রুগি সাধারণত পেটে ব্যথা, বমি এবং হালকা জ্বর নিয়ে আসে। পেটের ডান পাশে হালকা চাপ দিলেই রুগির ব্যথা অনুভূত হয়।
পেট
ব্যথাঃ- পেট ব্যথা সবার প্রথমে দেখা দেয় এবং এটা অ্যাপেন্ডিসাইটিসএর
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। পেটে ব্যথা সাধারণত প্রথমে নাভীর চারিদিকে
অনুভূত হয়, এরপর ব্যথা পেটের ডান দিকে নিচে অনুভব হয়। তবে অ্যাপেন্ডিক্স
ফেটে গেলে ব্যথা সারা পেটে ছড়িয়ে যায়।
জ্বরঃ- জ্বর সাধারণত ৩৮° সেলসিয়াস এর মতো বা কম থাকে। তবে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে তীব্র জ্বর আসতে পারে।
বমি
বা বমি বমি ভাবঃ পেটে ব্যথা হওয়ার পরই বমি হয় বা বমি বমি ভাব আসে এবং
বাচ্চা কিছু খেতে চায় না। পেটে ব্যথা সাথে বমি ও খেতে না চাওয়া
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর পক্ষে যায়।
ডায়রিয়াঃ- অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে কখনো
কখনো এগুলোর সাথে ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণত যদি অ্যাপেন্ডিক্স সিকামের
পিছনে থাকে সেই ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হয়।
অন্য যে কারনে এই সমস্যাগুলি হতে পারেঃ
একুইট গ্যাস্ট্রোএন্টেরিটিটিস:-
একুইট
গ্যাস্ট্রোএন্টেরিটিটিস বা একুইট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গ অনেক সময় একই
রকম হয়। একুইট গ্যাস্ট্রোএন্টেরিটিটিস এ সাধারণত বমি আগে শুরু হয় আর
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে সাধারণত ব্যথা আগে শুরু হয়।
প্রস্রাবে ইনফেকশন:-
প্রস্রাবে ইনফেকশন হলেও পেটে ব্যথা বা অ্যাপেন্ডিসাইটিস মনে হতে পারে। বমি বমি ভাব থাকতে পারে এবং সাথে জ্বরও থাকতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা:-
কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েও পেট ব্যথা হতে পারে।
সাথে বমি থাকতে পারে। তবে সাধারণত জ্বর থাকে না।
মেজেন্ট্যারিক লিম্ফএডেনাইটিসঃ-
পেটের
ভিতরের ছোট ছোট গ্ল্যান্ড ( লিম্ফ নোড) বড় হতে পারে। ভাইরাল ইনফেকশন বা
ইনফ্লুয়েঞ্জা হলেও এই গ্ল্যান্ডগুলো বড় হয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মতো ব্যথা
হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা:
শিশুদের
ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিস নির্নয় করা একটু কঠিন। কারন বাচ্চারা এসে ঠিক
মতো বলতে পারে না কোথায় ব্যথা। ফলে মায়েরা অপেক্ষা করে যে ভালো হয়ে যায় কি
না। বাচ্চাদের সাধারণত এক তৃতীয়াংশ রুগির ক্ষেত্রেই ঠিকমতো সমস্যা বলতে
পারে না বা বুঝাতে পারে না বা এসে অন্য সমস্যার কথা বেশি বলে। ফলে কিছু
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে রক্তের সিবিসি ও
আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো এক্স-রে ও
সিটিস্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে। যদি রক্তের রিপোর্ট ও আলট্রাসনোগ্রাম
স্বাভাবিক থাকে কিন্তু রুগির অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সব লক্ষণগুলো থাকে তবে
ধরে নিতে হবে এটা অ্যাপেন্ডিসাইটিসই।
চিকিৎসা :
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের
চিকিৎসা হলো আক্রান্ত অংশ বা অ্যাপেন্ডিক্স যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচারের
মাধ্যমে কেটে ফেলে দেওয়। অনেকে অপারেশন করাতে চায় না। আসলে অপারেশন না করে
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুটির ক্ষেত্রে ঝুঁকি
আরও বেশি , অনেক সময় চিকিৎসকের জন্যও এই সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন হয়। কিছু
কিছু সময় এন্টিবায়োটিক এ রেসপন্স করে তখন কিছু দিন অপেক্ষা করা যায়। তবে
অনেক ঝুকি থেকে যায়। কারন অ্যাপেন্ডিক্স ইনফেকশন হয়ে যে কোন সময় ফেটে যেতে
পারে তখন চিকিৎসা করা অনেক ঝুকিপূর্ণ। দেখা গেছে শিশুদের ক্ষেত্রে ১ দিন
পার হওয়ার পরই অ্যাপেন্ডিক্স ফুটো হচ্ছে যেখানে বড়দের ৩-৪ দিন সময় লাগে
অ্যাপেন্ডিক্স ফুটো হয়ে পেরিটোনাইটিস আরম্ভ হতে। আবার অপারেশন না করালে
আবার যে কোন সময় অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে। এজন্য অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে
অপারেশন করতে হবে।
অভিভাবকদের করনীয় :
* শিশুকে বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ান এবং ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
* শিশুর পেটে ব্যথা হলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন বা কোন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ডাঃ নাজমুল ইসলাম
এমবিবিএস, এমএস( শিশু সার্জারি)
আবাসিক সার্জন
ঢাকা শিশু হাসপাতাল।
*** শিশুর অপারেশন বিষয়ক যে কোন তথ্যের জন্য যোগাযোগ : ০১৭৭৭৩৩১৫১১

