মেরুদণ্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে প্রচন্ড ব্যথা হলে এর কারণে কোনো শক্ত জায়গায় বসাও অসম্ভব হয়ে যায়। মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করা এই সমস্যাটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কক্সিডাইনিয়া বলে। কক্সিস আকৃতিতে সামনের দিকে কনকেভ বা অবতল লেন্সের মতো এবং পেছনের দিকে কনভেক্স বা উত্তল লেন্সের মতো। কক্সিস পেশি, লিগামেন্ট ও টেন্ডনের মাধ্যমে পায়ুপথের আশাপাশের অংশের স্ট্যাবিলিটি মেইনটেন করে এবং এর পায়ুপথের সংশ্লিষ্ট মাংসপেশিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। দুই পাশে ইসচিয়াল টিউবেরোসিটি এবং মাঝখানে কক্সিস শরীরের ওজন বহন করে। পেছনে ঝুঁকে বসলে কক্সিসের ওপর প্রেসার বেশি পড়ে এবং সামনে ঝুকলে প্রেসার কম পড়ে। তাই কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথায় রোগীরা সামনের দিকে ঝুঁকে বসে। পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয় এ সমস্যাটি।
কারনঃ
- আঘাত জনিত কারণে বিশেষ করে পেছনের অংশ পড়ে গিয়ে সরাসরি আঘাত পেলে
- আনস্ট্যাবল কক্সিস থাকলে
- ডিসপ্লেসমেন্ট কক্সিস থাকলে
- প্রসবের সময় আঘাত বা ডেলিভারিতে দীর্ঘ সময় লাগলে
- সার্জারিজনিত সমস্যা
- মিসএলাইন্ড, শক্ত বা লম্বা কক্সিস থাকলে
- রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা
বাইসাইকেল চালালে
- প্রসবের সময় আঘাত পেলে
- ইনফেকশন, ক্যালসিয়াম ডিপোজিশন এবং টিউমারের কারনে
- বাড়তি হাঁড়ের কারনেও এটি হতে পারে
- দীর্ঘদিন ধরে ককসিসে প্রদাহ থাকলে
- নারীদের ক্ষেত্রে প্রসবের সময় আঘাত বা প্রলংগড ডেলিভারি এর কারণে
- পেশির সংকোচন, পাইলোনাইডাল সাইনাস, পাইলোনাইডাল সিস্ট, মেনিসকাল সিস্ট, রিপিটেটিভ স্ট্রেইন, যেমন- দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালালে
- অনেক সময় মেরুদন্ডে বা ককসিসে মেজর অপারেশন হলে
- গর্ভপাত হলে
লক্ষণঃ
- বসার সময় বা বসার পর ব্যথা অনুভূত হয়
- দীর্ঘক্ষণ বসলে ব্যথা বেড়ে যায়
- শক্ত জায়গায় বসা যায় না
- কখনও বসা থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা হয়
- আবার কখনও নরম জায়গায় বসলেও ব্যথা হয় পেছনে হেলান দিয়ে বসলে বেশি ব্যথা হয় কিন্তু সামনে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কম হয়
- গভীর ব্যথা হয় ককসিসের আশপাশে
- রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখতে হয়।
- মলত্যাগ করার সময় বা আগে ব্যথা হয়
- সহবাসের সময়ও ব্যথা হতে পারে
- কখনো কখনো কোমর ব্যথার সাথে ককসিডাইনিয়া
সম্পৃক্ত
- কোমরের একেবারে শেষ প্রান্তে ব্যথা অনুভূত হয়
- বেশি সময় ধরে বসে থাকলে ব্যাথা তীব্র হয়
- কক্সিন ও কক্সিম সংলগ্ন স্থানে ব্যথা বেশি হয়
- কোমরের একেবারে শেষ প্রান্তে ব্যথা অনুভূত হয়
- সাইকেল চালানো বা এ রকম কোথাও বসলে যেখানে সরাসরি পশ্চাৎদেশে চাপ পড়ে, তাহলে ব্যথা বাড়ে
- কোষ্টকাঠিন্যের সময় ব্যথা বাড়ে
চিকিৎসাঃ
কক্সিডাইনিয়ায় আক্রান্ত হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।সঠিক চিকিৎসা মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে
পারেন
- বসার স্থানে নরম হোল কুশন ব্যবহার করে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়
- ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করা।
সেল্ফ কিছু ব্যয়াম যা এ সমস্যাটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ; প্রথমে যেটি করবেন
- লম্বা শ্বাস নিতে হবে নাক দিয়ে এর সঙ্গে তলপেট এবং প্রস্বাস করবার জন্য প্রয়োজনীয় মাংসগুলো শক্ত করে ভেতরের দিকে টেনে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এখাবে ১৫ বার, দৈনিক ৩ বেলা।
-- প্রথমে একটি চেয়ারে বসুন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকুন। এবার প্রস্রাব ধরে রাখার জন্য দরকারি মাংসপেশিগুলো সংকুচিত করুন। এই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এবার সংকুচিত মাংসপেশি ছেড়ে দিন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৩ বার করুন।
-- একটি শক্ত বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার দুই হাঁটুর ফাঁকে একটি নরম বল বা বালিশ রেখে এতে চাপ দিন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন আর ছাড়ুন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন।
-- সোজা চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার কোমর ওপরের দিকে ওঠান, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছাড়ুন। এটিও দিনে ৪ বেলা এবং ৫-৬ বার।
এছাড়াও একটি গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে ১০/১৫ মিনিট বসে থাকতে হবে।
কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার থেকে মুক্তির জন্য যে নিয়মকানুনগুলো মেনে চলবেনঃ
- মেরুদণ্ড এলিয়ে বসা যাবে না
- সঠিকভাবে বসা, যাতে পশ্চাদেদশে বেশি চাপ না
পড়ে
- শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা
- নিয়মিত উপযুক্ত স্থেন্দিনিং ও পেশি শক্তিশালী
হওয়ার ব্যায়াম করা
- দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানো যাবে না
- শক্ত জায়গায় বসা থেকে বিরত থাকতে হবে
- বসার স্থানে কুশন ব্যবহার করে বসতে হবে
-হাড়ঁ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ১/২ টা ইনজেকশন নেয়া(অনেক ক্ষেত্রে একদম ভালো হয়ে যায়)
দীর্ঘ দিন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, ঔষধ নেওয়া সত্ত্বেও যদি কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা না কমে সে ক্ষেত্রে কক্সিস সার্জারি করতে হবে।

No comments:
Post a Comment