Thursday, August 13, 2020

ব্যথাঃ আমাদের করনীয়

 ব্যাথা না থাকলে কতই না ভালো হতো,আসলেই কি তাই?? 😊

ক্যানসার/ টিউমার এর রোগীদের শুরুর দিকে কোন ব্যাথাই থাকে না,বেশ কিছু দিন শরীরে বাসা বেধে যখন সমস্যার তৈরি করে দেখা যায় আর কিছুই করার নাই,অনেক সময় চলে গেছে। তাই যদি শুরুতেই ব্যাথা হতো, তবে আরও আগেই ডাক্তার এর কাছে যেতে পারতেন,আগেই ডায়াগনোসিস হতো,ঠিক না? এবার আসি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেন ব্যথা হয়? আঘাতের কারণে হতে পারে,ওজন বেশি হলে হতে পারে,একি পজিশন এ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করলে হতে পারে, ইনফেকশন হলে হতে পারে,শরীরের ভিতরের কোন অন্ত্র বা অরগ্যান এর প্রব্লেম হলেও হতে পারে, আরও অনেক কিছু। কারও কোমড় ব্যাথা হলে,যদি আঘাত না পায় প্রথমে এই চিন্তা মাথায় আসে কিডনির কিছু হলো না তো!!! কিন্তু ১০০ জনের কোমড় ব্যাথা হলে সেখানে ৯৯ জনেরই কিডনীর কোন জটিলতা থাকে না। ৯৮% লোকেরই কোন অপারেশন লাগে না।কিন্তু আমরা কি করি!!! একটা গ্রুপ ডাক্তার এর কাছে যাবেনই না,কারণ ডাক্তার ব্যাথার ওষুধ দিবেন,আর আপনার কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে!!! আর একটা গ্রুপ ৭ দিন ফারমেসি থেকে, ৭ দিন এই চেম্বার ওই চেম্বার করে ৬ মাস ১ বছর ধরে শুধু ব্যাথার ওষুধ খেয়েই যাবেন। আর এক গ্রুপ আমাদের মা,খালা,চাচী,দাদীরা যারা ১ মাস শুধু খেয়াল করে যাবেন কেন হাল্কা ব্যাথা হচ্ছে!! পরের মাসে বাসার লোকজন কে জানাবেন বলবেন আর কিছু দিন দেখি তার পর ডাক্তার এর কাছে যাবো,এভাবে যখন ৬ মাস চলে যাবে,আর উঠে দাড়াতে পারছেন না,৪ জন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। আর এক গ্রুপ ১ বছর আগে তো ব্যাথার জন্ন্য ডাক্তার এর কাছে গিয়েছিলাম ভালো হয়ে গিয়েছিল, আবার একি সমস্যা কয়েকদিন ওই ঔষধ গুলো খেয়েই দেখি না। আর এক গ্রুপ প্রতিবেশির প্রেস্ক্রিপশন দেখে ঔষধ খান,মনে করেন ওনার সমস্যা তো আমার মতোই,খেয়েই দেখি না ঔষধ গুলো। আর এক গ্রুপ ডাক্তার এর কাছে যেয়ে বলবেন কোন টেস্ট করাবো না,এমনি ঔষধ লিখে দেন। আর এক গ্রুপ এসে বলবেন আমাকে কিন্তু ব্যাথার কোন ঔষধ দিবেন না,শুনেছি কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। এই ধরনের কারোই ব্যথা ভালো হবে না বা আপনি যথেষ্ট সচেতন না.... প্রথম ধাপে আঘাত জনিত ব্যথায় করনীয় নিয়ে অালোচনা করছি.. 

💢 অাঘাত জনিত ব্যথায় আপনার করনীয় কিঃ  

(১)প্রথমেই ঘাবড়ে যাবেন না,আঘাতের ধরনটা নির্নয় করুন। যদি অাঘাতের পরও হাটা চলা করতে পারছেন,অাঘাতের অাশে পাশের জয়েন্ট কোন সমস্যা ছাড়াই নাড়াতে পারছেন তা হলে বুঝতে হবে অাঘাত তেমন জটিল না,এ ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা তেই ভালো হবার সম্ভাবনা বেশি। 

(২) যদি আঘাতের তীব্রতা অনেক বেশি হয় এবং আঘাতের পরে আপনি হাটা চলা করতে পারছেন না বা আশেপাশের জয়েন্ট এ অনেক ব্যথা এবং অনেক বেশি ফুলে গেছে তবে আপনার অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে বা জরুরী বিভাগে যেতে হবে।  

(৩)আঘাতের কারণে যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন,অথবা বমি হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় অথবা অনেক বেশি পরিমানে রক্ত ক্ষরন হয় তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।  

(৪)যে কোন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা বা অগ্নি কান্ডের ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।    

(৫) গাছ থেকে পড়ে যাওয়া বা যেকোনো বিল্ডিং থেকে পড়ে গেলেও হাসপাতালে নিতে হবে। (৬) যদি মনে হয় হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে তবে,আক্রান্ত স্থান যতটা পারা যায় কম মুভমেন্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যান I  

➽ অল্প আঘাতে বাসায় কি করবেনঃ  

(১) আঘাত প্রাপ্ত জায়গায় বরফ/আইস দিন  

(২) আঘাত প্রাপ্ত জায়গা টা রেস্ট এ রাখুন-হাতে হলে একটা এলবো ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন আর পায়ে হলে একটা বালিশ দিয়ে পা টা উঁচুতে রাখুন।কোমড় ব্যথায় সামনে ঝুকে যেসব কাজ করে কয়েক দিন সেসব না করুন। 

 (৩) অল্প ব্যথায় প্যারাসিটামল ট্যাবলেট অার বেশি ব্যথা হলে রোলাক ট্যাবলেট খেতে পারেন। (৪) ২/৩ দিনের মধ্যে না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। 

অনেক বেশি অাঘাত বা সিরিয়াস ইঞ্জুরি হলে করনীয়ঃ 

(১) দ্রুত সাহায্যের জন্য আশেপাশের লোকদের ডাকুন বা সাহায্য নিন। 

(২) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে কাপড় বা প্রেসার ব্যান্ডেজ দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিন(মনে রাখবেন শরীরের ৩০ ভাগ রক্তক্ষরণ হলে সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তি শকে/ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন) 

(৩)আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক আছে কিনা খেয়াল করুন(এ ক্ষেত্রে ইউটিউব দেখে শিখে নিতে পারেন কিভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা যায়।) 

 (৪) অাঘাত প্রাপ্ত জায়গায় রেস্টে রাখার জন্য এলবো ব্যাগ পায়ের ক্ষেত্রে স্লিং,কোমড়ের জন্য লাম্বার করসেট, ঘাড়ের ক্ষেত্রে সারভাইকাল কলার ব্যবহার করুন(এগুলো রোগীকে হাসপাতালে নেয়া পর্যন্ত অার কোন অাঘাত হতে রক্ষা করবে এবং ব্যথা কমাবে) 

(৫)যদি হাসপাতাল একটু দূরে হয় তবে আশে পাশে কোথাও হতে অন্তত একটা স্যালাইন লাগিয়ে নিন ও একটা ব্যথার ইঞ্জেকশন বা সাপোজিটরি দিন। 

➽ যেসব ক্ষেত্রে খুবই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবেঃ  

(১) আঘাতের পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে বা কয়েকবার বমি করলে 

(২) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে 

 (৩) হাতে বা পায়ে আঘাতের পর পালস্ না পেলে(৬ঘন্টার মধ্যে টারশিয়ারি হাসপাতালে নিতে হবে) 

(৪)মেরুদণ্ড বা মাথায় বা ঘাড়ে অাঘাতের কারণে হাত পা অবশ বা প্যারালাইসিস হয়ে গেলে। 

(৫) কোন হাড় ভেংগে গেলে বা কোন জয়েন্ট অতিরিক্ত ফুলে গেলে বা স্বাভাবিক পসিশন হতে ছুটে গেলে।  

(৬) শরীরে ২০-৩০ ভাগের বেশি পুড়ে গেলে বি.দ্রঃ উপরের বক্তব্য গুলোই শুধুই সাধারণ সবাই যেন বুজতে পারেন এই ভাবে লেখার চেষ্টা করা।

 

 ডাঃ রিপন কুমার রায় 

জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ফেলো,নিউ দিল্লি,ইন্ডিয়া। 

ফেলোশীপ ইন ট্রমা সার্জারি,সিংগাপুর।

অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন, 

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), 

শেরে বাংলা নগর,ঢাকা। 

No comments:

Post a Comment

শিশুর জিহবা জড়তা (Tongue Tie)

 শিশুর জিহবা জড়তা, বা টাং টাই (Tongue Tie), হলো একটি জন্মগত অবস্থা যেখানে শিশুর জিহবার নিচের অংশে একটি পাতলা টিস্যু (ফ্রেনুলাম) থাকে যা জিহ...