Friday, August 14, 2020

গোড়ালি ব্যথার কারন ও প্রতিকারঃ

 

পায়ের গোড়ালি ব্যথা হওয়ার বেশ কয়েকটি কারন রয়েছে। শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, গোড়ালির বায়োম্যাকানিক্স পরিবর্তন হলে কিংবা পায়ের কাফ মাসেল অস্বাভাবিক হলে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত পায়ের গোড়ালির হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হিল স্পার সমস্যাটি হয়। এটি পায়ের গোড়ালির নিচে সফট টিস্যু/মাংসপেশিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে হিল স্পার অর্থাৎ পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির রোগীদের তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এটিকে ক্লিনিক্যালি ক্যালকেনিয়াল স্পারও বলা হয়। এই সমস্যায় পায়ের ক্যালকেনিয়াস (Calcaneus) নামক হাড়ে খানিকটা বাড়তি হাড় তৈরি হয়, যার ফলে গোড়ালিতে ব্যথা করে। এ ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। 


মহিলাদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়, তবে যে কেউই যেকোন বয়সে হিল স্পার তথা ক্যালকেনিয়াল স্পারের কারনে গোড়ালির ব্যথায় ভুগতে পারেন।


আরেকটি সমস্যার কারনে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। এটিকে আমরা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস বলি। প্ল্যানটার ফ্যাসা হচ্ছে মাংসপেশির নিচে অবস্থিত একটি ঝিল্লি। এটিতে প্রদাহজনিত কারনে ব্যথা হতে পারে। ঘুম থেকে ওঠার পর পা ফেললে পুরো পায়ের পাতা কিংবা গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়।


হিল স্পার/ গোড়ালি ব্যথার কারনসমূহঃ


     -সব সময় শক্ত জুতা পরিধান করা। 

    - দীর্ঘদিন পায়ের মাংসপেশিতে টান লেগে থাকলে

    - গোড়ালির মাংসপেশি ছিড়ে গেলে

    - উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি হলে

     -পায়ের জন্মগত/ গঠনগত কিছু সমস্যার কারনে

     -উঁচু হিল পরলে।

     -অনেক সময় মাত্রারিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে।


গোড়ালি ব্যথার লক্ষণঃ


- পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হবে

  - গোড়ালি ফুলে যায়

  - গোড়ালি লাল এবং গরম অনুভব হয়

  - হাঁটা বা দৌঁড়ানোর সময় ব্যথা বেড়ে যায়

  - ঘুম থেকে উঠার পর পায়ের গোড়ালিতে সুঁচ ফোটার মত তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়


গোড়ালির ব্যথা এড়াতে করনীয়ঃ


   - স্বাভাবিকভাবে হাঁটা

   - শক্ত জায়গায় হাঁটা যাবেনা

   - শক্ত জুতা পায়ে দেয়া এড়াতে হবে

   - শরীরের ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

   - ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

   - এক পায়ে ভর দিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবেনা


গোড়ালির ব্যথার চিকিৎসাঃ


- নরম জুতা পরিধান করতে হবে। এমন জুতো ব্যবহার করতে হবে, যা গোড়ালিকে পায়ের আঙুলের থেকে কিছুটা উঁচুতে রাখবে। 


-ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। ইউরিক এসিড কমানোর ঔষধ খাওয়া যেতে পারে যদি ইউরিক এসিড বেশি থাকে 

- গোড়ালির নিচে দিনে তিন/চারবার আইস প্যাক ব্যবহার করবেন অথবা কুসুম গরম পানি বালতিতে নিয়ে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে -১৫ থেকে ২০ মিনিট। 

- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

- নরম ও আরামদায়ক ফ্ল্যাট স্যান্ডেল/ জুতো পরতে হবে।


Calcaneal Spur বা পায়ের গোড়ালি ব্যাথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। 

অনেক সময় অামরা চিকিৎসকরা দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে কিছু ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে থাকি যা ভালো উপকারে আসে এবং দ্রুত ব্যথা কমিয়ে দেয়।ইঞ্জেকশন আবশ্যিক ভাবে এক্সপার্ট এবং অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক এর মাধ্যমে দিতে হবে। ৭০-৯০ ভাগ রোগী দেখা যায় এতেই ভালো হয়ে যায়। ১০% রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন লাগতে পারে।


নিজস্ব (সেল্ফ) থেরাপিউটিক এক্সারসাইজঃ 


- একটি দেয়ালে দুই হাত দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যেন একটি পা সামনে সামান্য ভাঁজ হয়ে থাকে এবং আর একটি পা পেছনে সোজা করে থাকে। পিঠ সোজা রাখতে হবে এক্ষেত্রে। এরপর পেছনের পা টানটান করে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এভাবে ৮ থেকে ১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


- সিঁড়িতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গোড়ালি সিড়ির বাইরের অংশে রাখতে হবে। এরপর শরীরের ভর পায়ের গোড়ালিতে রাখতে হবে। এভাবে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে দৈনিক ৮-১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


- দিনে অন্তত দুই বার ২০/৩০ বার মিনিট করে 'টিপ টো' ব্যায়াম করতে হবে। অর্থাৎ পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোড়ালি উঁচু করে দাঁড়িয়ে আবার ফ্লোরের সাথে ফ্ল্যাট করে দাঁড়াতে হবে।


গোড়ালির ওপর চাপ কমাতে কিছু নিয়মকানুনঃ


- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পায়ের যেকোনো ব্যথা কমাতে এটি বেশ কার্যকর


- উঁচু হিলের ও শক্ত সোলের জুতা পরিহার করতে হবে


- নিচু বা মাঝারি হিলের জুতা ব্যবহার করতে হবে


- উপরে উল্লেখিত পায়ের সেল্ফ স্ট্রেচিং ব্যায়াম নিয়মিতভাবে করতে হবে


- এক পায়ে বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস পরিহার করুন।


ডাঃ রিপন কুমার রায় 

অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন,জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান, শেরেবাংলা নগর,ঢাকা।

জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ফেলো,নিউ দিল্লি,ইন্ডিয়া। 

ট্রমা সার্জারিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত,সিংগাপুর।

1 comment:

  1. আপনারা একটি নির্ভরযোগ্য স্থায়ী ডোমেইন ক্রয় করুন।

    ReplyDelete