Friday, August 16, 2024

শিশুর জিহবা জড়তা (Tongue Tie)

 শিশুর জিহবা জড়তা, বা টাং টাই (Tongue Tie), হলো একটি জন্মগত অবস্থা যেখানে শিশুর জিহবার নিচের অংশে একটি পাতলা টিস্যু (ফ্রেনুলাম) থাকে যা জিহবাকে নিচের চোয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই ফ্রেনুলামটি স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট বা মোটা হলে, এটি শিশুর জিহবার চলাচলকে সীমাবদ্ধ করে। এর ফলে শিশুর বুকের দুধ খাওয়া, কথা বলা, বা মুখের অন্যান্য কার্যকলাপ করতে সমস্যা হতে পারে।


### লক্ষণ:

1. **দুধ খাওয়ার সমস্যা**: শিশুর সঠিকভাবে স্তন্যপান করতে সমস্যা হতে পারে, কারণ তারা সঠিকভাবে স্তন ধরতে পারে না।

2. **কথা বলার সমস্যা**: বড় হলে শিশুর সঠিকভাবে কথা বলতে সমস্যা হতে পারে।

3. **মুখের হাইজিন**: জিহবা ঠিকমতো চলতে না পারলে, মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যা দাঁতের সমস্যার কারণ হতে পারে।


### চিকিৎসা:

1. **ফ্রেনুলটমি**: এটি একটি সাধারণ সার্জারি, যেখানে ডাক্তার জিহবার নিচের টিস্যুটিকে কেটে দেন। এটি সাধারণত খুব দ্রুত এবং সহজ প্রক্রিয়া।

2. **স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ**: কিছু ক্ষেত্রে, সার্জারি ছাড়াও ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়।


### কবে চিকিৎসা করা উচিত:

বাচ্চার বয়স ৯ মাস হওয়ার আগেই অপারেশন করা ভালো। তবে যে কোন বয়সেই অপারেশন করা যায়। যদি শিশুর দুধ খেতে বা কথা বলতে সমস্যা হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। শিশুর স্বাস্থ্য ও বিকাশের উপর প্রভাব পড়ছে কিনা তা দেখে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।



https://youtube.com/watch?v=A0NvVQlKp5Y&si=uDfE8yPmQixZBuUY

Monday, May 17, 2021

শিশুর অ্যাপেন্ডিসাইটিস




#অ্যাপেন্ডিসাইটিস
মানুষের বৃহদন্ত্রের( সিকামের নিচে) সঙ্গে লাগানো চিকন নলের মতো একটি সরু থলের নাম অ্যাপেন্ডিক্স। এটি সাধারণত লম্বায় ২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি থাকে সাধারণত তলপেটের ডান দিকে। তবে ম্যালরোটেশন থাকলে পেটের অন্য অংশেও থাকতে পারে। ছোট্ট এই থলেতে আকস্মিক প্রদাহ হলে দেখা দেয় অসহনীয় ব্যথা। এর নাম অ্যাপেন্ডিসাইটিস। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তা খুব মারাত্মক হয়। এ সময় শিশুরা খুব কান্নাকাটি করে। এ ধরনের ব্যথার উপসর্গ ও করণীয় সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে জটিলতা এড়ানো যায়। অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো পেটের ইমারজেন্সি সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

🌈 কেন হয়?


১) অ্যাপেন্ডিক্স এর নল কোন কারনে বন্ধ হয়ে গেলে। সাধারণত শক্ত মল দিয়ে এটা বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো পেটের কৃমি গিয়েও নল বন্ধ করে দিতে পারে।
২) যারা বেশি ফাস্টফুড খায় এবং যাদের খাবারে শাকসবজি, ফলমূল কম থাকে তাদের বেশি হয়।
৩) সালমোনিলা বা স্যিগেলা দিয়ে ইনফেকশন হলেও হতে পারে।

🌈 কিভাবে হয়?

অ্যাপেন্ডিক্স এর নল মল দিয়ে বন্ধ হয়ে গেলে এর পরের অংশ মোটা হয়ে ফুলে যার। ফলে এখানে রক্ত চলাচল কমতে থাকে। রক্ত চলাচল কমে গেলে অ্যাপেন্ডিক্স এর মাথা সাধারণত ফুটো হয়ে যায়। অ্যাপেন্ডিক্স এর মাথা ফুটো হয়ে গেলে মলের জীবাণু গুলো পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সেখানে পুজ জমা হয়। তখন পেরিটোন্যাইটিস শুরু হয় এবং রুগির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কখনো কখনো অ্যাপেন্ডিকুলার লাম্প হতে পারে। সাধারণত বাচ্চাদের খুব দ্রুত অ্যাপেন্ডিক্স এর মাথা ফুটো হয়ে যায়। দেখা গেছে ১ দিন পার হওয়ার পরই এই সমস্যা তৈরী হচ্ছে যেখানে বড়দের ৩-৪ দিন সময় লাগে অ্যাপেন্ডিক্স ফুটো হয়ে পেরিটোনাইটিস আরম্ভ হতে।

🌈 রুগি যে সমস্যা নিয়ে আসে:


রুগি সাধারণত পেটে ব্যথা, বমি এবং হালকা জ্বর নিয়ে আসে। পেটের ডান পাশে হালকা চাপ দিলেই রুগির ব্যথা অনুভূত হয়।
পেট ব্যথাঃ- পেট ব্যথা সবার প্রথমে দেখা দেয় এবং এটা অ্যাপেন্ডিসাইটিসএর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। পেটে ব্যথা সাধারণত প্রথমে নাভীর চারিদিকে অনুভূত হয়, এরপর ব্যথা পেটের ডান দিকে নিচে অনুভব হয়। তবে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে ব্যথা সারা পেটে ছড়িয়ে যায়।
জ্বরঃ- জ্বর সাধারণত ৩৮° সেলসিয়াস এর মতো বা কম থাকে। তবে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে তীব্র জ্বর আসতে পারে।
বমি বা বমি বমি ভাবঃ পেটে ব্যথা হওয়ার পরই বমি হয় বা বমি বমি ভাব আসে এবং বাচ্চা কিছু খেতে চায় না। পেটে ব্যথা সাথে বমি ও খেতে না চাওয়া অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর পক্ষে যায়।
ডায়রিয়াঃ- অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে কখনো কখনো এগুলোর সাথে ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণত যদি অ্যাপেন্ডিক্স সিকামের পিছনে থাকে সেই ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হয়। 

 



🌈 অন্য যে কারনে এই সমস্যাগুলি হতে পারেঃ

একুইট গ্যাস্ট্রোএন্টেরিটিটিস:-
একুইট গ্যাস্ট্রোএন্টেরিটিটিস বা একুইট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গ অনেক সময় একই রকম হয়। একুইট গ্যাস্ট্রোএন্টেরিটিটিস এ সাধারণত বমি আগে শুরু হয় আর অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে সাধারণত ব্যথা আগে শুরু হয়।
প্রস্রাবে ইনফেকশন:-
প্রস্রাবে ইনফেকশন হলেও পেটে ব্যথা বা অ্যাপেন্ডিসাইটিস মনে হতে পারে। বমি বমি ভাব থাকতে পারে এবং সাথে জ্বরও থাকতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা:-
কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েও পেট ব্যথা হতে পারে।
সাথে বমি থাকতে পারে। তবে সাধারণত জ্বর থাকে না।
মেজেন্ট্যারিক লিম্ফএডেনাইটিসঃ-
পেটের ভিতরের ছোট ছোট গ্ল্যান্ড ( লিম্ফ নোড) বড় হতে পারে। ভাইরাল ইনফেকশন বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলেও এই গ্ল্যান্ডগুলো বড় হয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মতো ব্যথা হতে পারে।

🌈 পরীক্ষা-নিরীক্ষা:

শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিস নির্নয় করা একটু কঠিন। কারন বাচ্চারা এসে ঠিক মতো বলতে পারে না কোথায় ব্যথা। ফলে মায়েরা অপেক্ষা করে যে ভালো হয়ে যায় কি না। বাচ্চাদের সাধারণত এক তৃতীয়াংশ রুগির ক্ষেত্রেই ঠিকমতো সমস্যা বলতে পারে না বা বুঝাতে পারে না বা এসে অন্য সমস্যার কথা বেশি বলে। ফলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে রক্তের সিবিসি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে। যদি রক্তের রিপোর্ট ও আলট্রাসনোগ্রাম স্বাভাবিক থাকে কিন্তু রুগির অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সব লক্ষণগুলো থাকে তবে ধরে নিতে হবে এটা অ্যাপেন্ডিসাইটিসই।

🌈 চিকিৎসা :

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা হলো আক্রান্ত অংশ বা অ্যাপেন্ডিক্স যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলে দেওয়। অনেকে অপারেশন করাতে চায় না। আসলে অপারেশন না করে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুটির ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি , অনেক সময় চিকিৎসকের জন্যও এই সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন হয়। কিছু কিছু সময় এন্টিবায়োটিক এ রেসপন্স করে তখন কিছু দিন অপেক্ষা করা যায়। তবে অনেক ঝুকি থেকে যায়। কারন অ্যাপেন্ডিক্স ইনফেকশন হয়ে যে কোন সময় ফেটে যেতে পারে তখন চিকিৎসা করা অনেক ঝুকিপূর্ণ। দেখা গেছে শিশুদের ক্ষেত্রে ১ দিন পার হওয়ার পরই অ্যাপেন্ডিক্স ফুটো হচ্ছে যেখানে বড়দের ৩-৪ দিন সময় লাগে অ্যাপেন্ডিক্স ফুটো হয়ে পেরিটোনাইটিস আরম্ভ হতে। আবার অপারেশন না করালে আবার যে কোন সময় অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে। এজন্য অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে অপারেশন করতে হবে।

🌈 অভিভাবকদের করনীয় :

* শিশুকে বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ান এবং ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
* শিশুর পেটে ব্যথা হলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন বা কোন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ডাঃ নাজমুল ইসলাম
এমবিবিএস, এমএস( শিশু সার্জারি)
আবাসিক সার্জন
ঢাকা শিশু হাসপাতাল।
 



*** শিশুর অপারেশন বিষয়ক  যে কোন তথ্যের জন্য যোগাযোগ : ০১৭৭৭৩৩১৫১১

Friday, September 4, 2020

রঙিন সবজি ও ফলের ভূমিকা

 



রং এর উপর ভিত্তি করে ফল বা সবজি কে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
যেমন- নীল বা বেগুনী, সাদা, লাল, হলুদ বা কমলা এবং সবুজ। এছাড়াও মিক্সড রঙেরও সবজি আছে।
#নীল_বা_বেগুনি_রংয়ের ফল ও সবজি-এ রঙের ফল ও সবজিতে প্রচুর ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিন ও ফিনোলিকস। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি এজিং ফ্যাক্টর বর্তমান রয়েছে । এ ধরনের সবজি কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধক, মূত্রনালী সুস্থতা বজায় রাখে, স্মৃতিশক্তি অক্ষুন্ন রাখে এবং বয়স ধরে রাখার ক্যাপাসিটর হিসেবে কাজ করে। যেমন- বেগুন, মিষ্টি আলু, জাম, ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি(আমাদের দেশে বেগুনি রংয়ের ক্যাপসিকাম ও বাঁধাকপি কম পাওয়া যায়) ইত্যাদি।
#লাল_বর্ণের ফল ও সবজি-লাল বর্ণের ফল ও সবজি হার্টের সুস্থতা, স্মৃতিশক্তি রক্ষা, কিছু কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং মূত্রনালির সুস্থতা বজায় রাখতে সক্ষম যেমন- তরমুজ, লাল আপেল, কমলা, চেরি, স্ট্রবেরি, বিট, লাল টমেটো, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। এসব রঙিন ফল দিয়ে খুব সহজে প্রতিদিন ইফতারিতে ফ্রুট ককটেল এর আয়োজন করতে পারেন।
#সবুজ_বর্ণের ফল ও সবজি-গাঢ় সবুজ রঙের ফল ও সবজি গ্রহণ ক্যান্সার প্রতিরোধক, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, দৃষ্টিশক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা দান করে। যেমন-সবুজ আপেল, বাঁধাকপি, আমড়া, জলপাই, লেটুস, কাঁচামরিচ, কাঁচা আম,কচি কাঁঠাল ইত্যাদি।এ রমজানে প্রতিদিন চেষ্টা করবেন গাঢ় সবুজ রঙের সবজি খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার।
#সাদা_রঙের ফল ও সবজি-সাদা রঙের ফল ও সবজির মধ্যে আছে সাদা পিচ, লিচু, জামরুল, ফুলকপি, রসুন, আদা, মাশরুম, আলু, সাদা কর্ন, লাউ, ঝিঙ্গা, জালি কুমড়া, ইত্যাদি প্রধান‌‌। বলাবাহুল্য সাদা রংয়ের ফল ও সবজিতে সাধারণত কম ক্যালরি থাকে (আলু ছাড়া) ‌এই সবজি ও ফল দেহকে সুস্থ রাখে। রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হূদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
#হলুদ_বা_কমলা বর্ণের ফল ও সবজি-এই গোষ্ঠীর ফল ও সবজিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ক্যারোটিন এবং দুই ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল থাকে।এছাড়া হার্টের সুস্থতা, দৃষ্টিশক্তি প্রখরতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকি এরা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। উৎস হিসেবে হালকা হলুদ রঙের আঙুর, লেবু, পাকা পেঁপে, আনারস, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি কর্ন, গাজর, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
উপরে উল্লেখিত সবজি ও ফলে রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, লৌহ এবং প্রচুর খাদ্য আঁশ। রমজানের এই মৌসুমে কমপক্ষে পাঁচ রকমের ফল ও সবজি গ্রহণ করুন। বাজারে বিভিন্ন বর্ণের সমাহার থেকে আপনার শরীর অবস্থা বুঝে নিজেই বেছে নিতে পারেন কোন বর্ণের সবজি ও ফল আপনার প্রয়োজন।
এই লক ডাউনে অনেক সময় একবারে 5 রকমের সবজি কিনে ছোট ছোট প্যাকে আলাদা করে জিপ্লক ব্যাগে অথবা ইয়ার কন্টেইনার বক্সে রেখে ফ্রিজিং করতে পারেন। এতে সাত দিনের সবজি স্টোর করে খাওয়া যেতে পারে।
Fatim Tuj Zuhura 
Nutrition Consultant 
Marine Health Care 
Khilkhet, Dhaka



Thursday, August 20, 2020

মলদ্বারের ফিস্টুলা

 **মলদ্বারের ফিস্টুলা কি?***



Fistula in ano- মানে মলদ্বারের পাশে একধরনের নালী। যেখান দিয়ে কখনো পুঁজ, পানি, পচা রক্ত আবার কখনো মল ঝরতে পারে। কারো ক্ষেত্রে এটা সবসময় হয়। কারো ক্ষেত্রে কিছুদিন ভালো থাকে। তারপর হঠাৎ ফুলে যায়, ব্যথা হয়, জ্বর হতে পারে। ফোলাটা বাড়তে বাড়তে একসময় ফেটে যায়। ব্যথা কমে যায়। কিন্তু ময়লা ঝরতে থাকে। কারো ক্ষেত্রে সবসময় ময়লা ঝরে আবার কারো ক্ষেত্রে কিছুদিন ভালো থাকে। এই ভালো থাকার সময়টা কারো ক্ষেত্রে কয়েকদিন, কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে।

***মলদ্বারের ফিস্টুলা কেন হয়?**

মলদ্বারের পাশে কিছু গ্রন্থি থাকে। যেগুলো থেকে রস নিঃসৃত হয়ে পায়খানার রাস্তা পিচ্ছিল রাখে। ফলে সহজে পায়খানা হয়। কোন কারনে এই গ্রন্থিতে ইনফেকশন হলে মলদ্বারের পাশে ফুঁড়া হয়। পরবর্তীতে সেটা ফেটে গিয়ে একটা নালীর মত হয় সেটাকেই ফিস্টুলা বলা হয়।

**মলদ্বারের ফিস্টুলা কয় ধরনের?**

 

• Simple fistula(সাধারন ফিস্টুলা)-

o এটার চিকিৎসা সহজ।
o একবার সার্জারিতেই ভালো হয়ে যায়।

• Complex fistula(জটিল ফিস্টুলা)-

o চিকিৎসা জটিল।
o একাধিক সেটিং এ সার্জারি লাগতে পারে।
কি করব?

***মলদ্বারের ফিস্টুলা কি ভালো হয়?**

মলদ্বারের ফিস্টুলা খুবই common একটি মলদ্বারের সমস্যা। যারা এই রোগটিতে ভোগেন তাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি মাথায় ঘোরপাক খায় তা হচ্ছে এটা ভালো হয় কিনা? অথবা একবারে ভালো হয় কিনা? অনেকের মাঝে প্রচলিত ভুল ধারনা যে এই রোগ ভালো হয় না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। চিকিৎসায় এই রোগ পুরোপুরি ভালো হয়।

***মলদ্বারের ফিস্টুলার চিকিৎসা কি***

প্রথম কথা হল এটা ঔষধে ভালো হয় না। এর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারি। অনেক ধরনের ফিস্টুলা আছে। চিকিৎসা নির্ভর করে ফিস্টুলা এর প্রকারভেদের উপর। ফিস্টুলা রোগের কমপক্ষে ১৫- ২০ ধরনের সার্জারি আছে। সফলতা নির্ভর করে সঠিক রোগ নির্ণয় (ফিস্টুলার ধরন) ও সঠিক সার্জারির উপর। সাধারনত অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক settings এই ঠিক হয়ে যায়। তবে জটিল ফিস্টুলা হলে একের অধিক settings লাগতে পারে। যেটাকে বলা হয় Staged fistula surgery অর্থাৎ ধাপ বাই ধাপ সার্জারি। তবে অনেকেই নানা রকম প্রচারণায় প্রলুব্দ হয়ে অপচিকিৎসার শিকার হন। ভোগান্তি বাড়ে, জটিলতা বাড়ে। অনেক সময় এখানে cancer পর্যন্ত হতে পারে। তাই সময় থাকতে আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি, আর অপচিকিৎসাকে না বলি। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করি।

***মলদ্বারের ফিস্টুলার চিকিৎসা কোথায় করাবেনঃ

মলদ্বারের ফিস্টুলার চিকিৎসা ঠিকঠাক মতো না করতে পারলে বার বার হয়।
সুতরাং অবশ্যই একজন পায়ুপথের রোগ বিশেষজ্ঞ (কলোরেক্টাল সার্জন) সার্জনের দ্বারা ফিস্টুলার চিকিৎসা করাবেন...

 
                                                 DR. MD MAHMUDUL HASAN PANNU
                                  MBBS, BCS(Health), FCPS (Surgery), MS(Colorectal Surgery -Thesis)
                                                         COLORECTAL SURGEON
                                                   (পায়ুপথের রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন)
                                                                   BSMMU, Dhaka.

Friday, August 14, 2020

গোড়ালি ব্যথার কারন ও প্রতিকারঃ

 

পায়ের গোড়ালি ব্যথা হওয়ার বেশ কয়েকটি কারন রয়েছে। শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, গোড়ালির বায়োম্যাকানিক্স পরিবর্তন হলে কিংবা পায়ের কাফ মাসেল অস্বাভাবিক হলে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত পায়ের গোড়ালির হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হিল স্পার সমস্যাটি হয়। এটি পায়ের গোড়ালির নিচে সফট টিস্যু/মাংসপেশিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে হিল স্পার অর্থাৎ পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির রোগীদের তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এটিকে ক্লিনিক্যালি ক্যালকেনিয়াল স্পারও বলা হয়। এই সমস্যায় পায়ের ক্যালকেনিয়াস (Calcaneus) নামক হাড়ে খানিকটা বাড়তি হাড় তৈরি হয়, যার ফলে গোড়ালিতে ব্যথা করে। এ ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। 


মহিলাদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়, তবে যে কেউই যেকোন বয়সে হিল স্পার তথা ক্যালকেনিয়াল স্পারের কারনে গোড়ালির ব্যথায় ভুগতে পারেন।


আরেকটি সমস্যার কারনে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। এটিকে আমরা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস বলি। প্ল্যানটার ফ্যাসা হচ্ছে মাংসপেশির নিচে অবস্থিত একটি ঝিল্লি। এটিতে প্রদাহজনিত কারনে ব্যথা হতে পারে। ঘুম থেকে ওঠার পর পা ফেললে পুরো পায়ের পাতা কিংবা গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়।


হিল স্পার/ গোড়ালি ব্যথার কারনসমূহঃ


     -সব সময় শক্ত জুতা পরিধান করা। 

    - দীর্ঘদিন পায়ের মাংসপেশিতে টান লেগে থাকলে

    - গোড়ালির মাংসপেশি ছিড়ে গেলে

    - উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি হলে

     -পায়ের জন্মগত/ গঠনগত কিছু সমস্যার কারনে

     -উঁচু হিল পরলে।

     -অনেক সময় মাত্রারিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে।


গোড়ালি ব্যথার লক্ষণঃ


- পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হবে

  - গোড়ালি ফুলে যায়

  - গোড়ালি লাল এবং গরম অনুভব হয়

  - হাঁটা বা দৌঁড়ানোর সময় ব্যথা বেড়ে যায়

  - ঘুম থেকে উঠার পর পায়ের গোড়ালিতে সুঁচ ফোটার মত তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়


গোড়ালির ব্যথা এড়াতে করনীয়ঃ


   - স্বাভাবিকভাবে হাঁটা

   - শক্ত জায়গায় হাঁটা যাবেনা

   - শক্ত জুতা পায়ে দেয়া এড়াতে হবে

   - শরীরের ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

   - ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

   - এক পায়ে ভর দিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবেনা


গোড়ালির ব্যথার চিকিৎসাঃ


- নরম জুতা পরিধান করতে হবে। এমন জুতো ব্যবহার করতে হবে, যা গোড়ালিকে পায়ের আঙুলের থেকে কিছুটা উঁচুতে রাখবে। 


-ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। ইউরিক এসিড কমানোর ঔষধ খাওয়া যেতে পারে যদি ইউরিক এসিড বেশি থাকে 

- গোড়ালির নিচে দিনে তিন/চারবার আইস প্যাক ব্যবহার করবেন অথবা কুসুম গরম পানি বালতিতে নিয়ে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে -১৫ থেকে ২০ মিনিট। 

- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

- নরম ও আরামদায়ক ফ্ল্যাট স্যান্ডেল/ জুতো পরতে হবে।


Calcaneal Spur বা পায়ের গোড়ালি ব্যাথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। 

অনেক সময় অামরা চিকিৎসকরা দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে কিছু ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে থাকি যা ভালো উপকারে আসে এবং দ্রুত ব্যথা কমিয়ে দেয়।ইঞ্জেকশন আবশ্যিক ভাবে এক্সপার্ট এবং অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক এর মাধ্যমে দিতে হবে। ৭০-৯০ ভাগ রোগী দেখা যায় এতেই ভালো হয়ে যায়। ১০% রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন লাগতে পারে।


নিজস্ব (সেল্ফ) থেরাপিউটিক এক্সারসাইজঃ 


- একটি দেয়ালে দুই হাত দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যেন একটি পা সামনে সামান্য ভাঁজ হয়ে থাকে এবং আর একটি পা পেছনে সোজা করে থাকে। পিঠ সোজা রাখতে হবে এক্ষেত্রে। এরপর পেছনের পা টানটান করে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এভাবে ৮ থেকে ১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


- সিঁড়িতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গোড়ালি সিড়ির বাইরের অংশে রাখতে হবে। এরপর শরীরের ভর পায়ের গোড়ালিতে রাখতে হবে। এভাবে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে দৈনিক ৮-১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


- দিনে অন্তত দুই বার ২০/৩০ বার মিনিট করে 'টিপ টো' ব্যায়াম করতে হবে। অর্থাৎ পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোড়ালি উঁচু করে দাঁড়িয়ে আবার ফ্লোরের সাথে ফ্ল্যাট করে দাঁড়াতে হবে।


গোড়ালির ওপর চাপ কমাতে কিছু নিয়মকানুনঃ


- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পায়ের যেকোনো ব্যথা কমাতে এটি বেশ কার্যকর


- উঁচু হিলের ও শক্ত সোলের জুতা পরিহার করতে হবে


- নিচু বা মাঝারি হিলের জুতা ব্যবহার করতে হবে


- উপরে উল্লেখিত পায়ের সেল্ফ স্ট্রেচিং ব্যায়াম নিয়মিতভাবে করতে হবে


- এক পায়ে বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস পরিহার করুন।


ডাঃ রিপন কুমার রায় 

অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন,জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান, শেরেবাংলা নগর,ঢাকা।

জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ফেলো,নিউ দিল্লি,ইন্ডিয়া। 

ট্রমা সার্জারিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত,সিংগাপুর।

Thursday, August 13, 2020

ব্যথাঃ আমাদের করনীয়

 ব্যাথা না থাকলে কতই না ভালো হতো,আসলেই কি তাই?? 😊

ক্যানসার/ টিউমার এর রোগীদের শুরুর দিকে কোন ব্যাথাই থাকে না,বেশ কিছু দিন শরীরে বাসা বেধে যখন সমস্যার তৈরি করে দেখা যায় আর কিছুই করার নাই,অনেক সময় চলে গেছে। তাই যদি শুরুতেই ব্যাথা হতো, তবে আরও আগেই ডাক্তার এর কাছে যেতে পারতেন,আগেই ডায়াগনোসিস হতো,ঠিক না? এবার আসি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেন ব্যথা হয়? আঘাতের কারণে হতে পারে,ওজন বেশি হলে হতে পারে,একি পজিশন এ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করলে হতে পারে, ইনফেকশন হলে হতে পারে,শরীরের ভিতরের কোন অন্ত্র বা অরগ্যান এর প্রব্লেম হলেও হতে পারে, আরও অনেক কিছু। কারও কোমড় ব্যাথা হলে,যদি আঘাত না পায় প্রথমে এই চিন্তা মাথায় আসে কিডনির কিছু হলো না তো!!! কিন্তু ১০০ জনের কোমড় ব্যাথা হলে সেখানে ৯৯ জনেরই কিডনীর কোন জটিলতা থাকে না। ৯৮% লোকেরই কোন অপারেশন লাগে না।কিন্তু আমরা কি করি!!! একটা গ্রুপ ডাক্তার এর কাছে যাবেনই না,কারণ ডাক্তার ব্যাথার ওষুধ দিবেন,আর আপনার কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে!!! আর একটা গ্রুপ ৭ দিন ফারমেসি থেকে, ৭ দিন এই চেম্বার ওই চেম্বার করে ৬ মাস ১ বছর ধরে শুধু ব্যাথার ওষুধ খেয়েই যাবেন। আর এক গ্রুপ আমাদের মা,খালা,চাচী,দাদীরা যারা ১ মাস শুধু খেয়াল করে যাবেন কেন হাল্কা ব্যাথা হচ্ছে!! পরের মাসে বাসার লোকজন কে জানাবেন বলবেন আর কিছু দিন দেখি তার পর ডাক্তার এর কাছে যাবো,এভাবে যখন ৬ মাস চলে যাবে,আর উঠে দাড়াতে পারছেন না,৪ জন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। আর এক গ্রুপ ১ বছর আগে তো ব্যাথার জন্ন্য ডাক্তার এর কাছে গিয়েছিলাম ভালো হয়ে গিয়েছিল, আবার একি সমস্যা কয়েকদিন ওই ঔষধ গুলো খেয়েই দেখি না। আর এক গ্রুপ প্রতিবেশির প্রেস্ক্রিপশন দেখে ঔষধ খান,মনে করেন ওনার সমস্যা তো আমার মতোই,খেয়েই দেখি না ঔষধ গুলো। আর এক গ্রুপ ডাক্তার এর কাছে যেয়ে বলবেন কোন টেস্ট করাবো না,এমনি ঔষধ লিখে দেন। আর এক গ্রুপ এসে বলবেন আমাকে কিন্তু ব্যাথার কোন ঔষধ দিবেন না,শুনেছি কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। এই ধরনের কারোই ব্যথা ভালো হবে না বা আপনি যথেষ্ট সচেতন না.... প্রথম ধাপে আঘাত জনিত ব্যথায় করনীয় নিয়ে অালোচনা করছি.. 

💢 অাঘাত জনিত ব্যথায় আপনার করনীয় কিঃ  

(১)প্রথমেই ঘাবড়ে যাবেন না,আঘাতের ধরনটা নির্নয় করুন। যদি অাঘাতের পরও হাটা চলা করতে পারছেন,অাঘাতের অাশে পাশের জয়েন্ট কোন সমস্যা ছাড়াই নাড়াতে পারছেন তা হলে বুঝতে হবে অাঘাত তেমন জটিল না,এ ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা তেই ভালো হবার সম্ভাবনা বেশি। 

(২) যদি আঘাতের তীব্রতা অনেক বেশি হয় এবং আঘাতের পরে আপনি হাটা চলা করতে পারছেন না বা আশেপাশের জয়েন্ট এ অনেক ব্যথা এবং অনেক বেশি ফুলে গেছে তবে আপনার অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে বা জরুরী বিভাগে যেতে হবে।  

(৩)আঘাতের কারণে যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন,অথবা বমি হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় অথবা অনেক বেশি পরিমানে রক্ত ক্ষরন হয় তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।  

(৪)যে কোন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা বা অগ্নি কান্ডের ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।    

(৫) গাছ থেকে পড়ে যাওয়া বা যেকোনো বিল্ডিং থেকে পড়ে গেলেও হাসপাতালে নিতে হবে। (৬) যদি মনে হয় হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে তবে,আক্রান্ত স্থান যতটা পারা যায় কম মুভমেন্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যান I  

➽ অল্প আঘাতে বাসায় কি করবেনঃ  

(১) আঘাত প্রাপ্ত জায়গায় বরফ/আইস দিন  

(২) আঘাত প্রাপ্ত জায়গা টা রেস্ট এ রাখুন-হাতে হলে একটা এলবো ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন আর পায়ে হলে একটা বালিশ দিয়ে পা টা উঁচুতে রাখুন।কোমড় ব্যথায় সামনে ঝুকে যেসব কাজ করে কয়েক দিন সেসব না করুন। 

 (৩) অল্প ব্যথায় প্যারাসিটামল ট্যাবলেট অার বেশি ব্যথা হলে রোলাক ট্যাবলেট খেতে পারেন। (৪) ২/৩ দিনের মধ্যে না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। 

অনেক বেশি অাঘাত বা সিরিয়াস ইঞ্জুরি হলে করনীয়ঃ 

(১) দ্রুত সাহায্যের জন্য আশেপাশের লোকদের ডাকুন বা সাহায্য নিন। 

(২) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে কাপড় বা প্রেসার ব্যান্ডেজ দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিন(মনে রাখবেন শরীরের ৩০ ভাগ রক্তক্ষরণ হলে সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তি শকে/ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন) 

(৩)আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক আছে কিনা খেয়াল করুন(এ ক্ষেত্রে ইউটিউব দেখে শিখে নিতে পারেন কিভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা যায়।) 

 (৪) অাঘাত প্রাপ্ত জায়গায় রেস্টে রাখার জন্য এলবো ব্যাগ পায়ের ক্ষেত্রে স্লিং,কোমড়ের জন্য লাম্বার করসেট, ঘাড়ের ক্ষেত্রে সারভাইকাল কলার ব্যবহার করুন(এগুলো রোগীকে হাসপাতালে নেয়া পর্যন্ত অার কোন অাঘাত হতে রক্ষা করবে এবং ব্যথা কমাবে) 

(৫)যদি হাসপাতাল একটু দূরে হয় তবে আশে পাশে কোথাও হতে অন্তত একটা স্যালাইন লাগিয়ে নিন ও একটা ব্যথার ইঞ্জেকশন বা সাপোজিটরি দিন। 

➽ যেসব ক্ষেত্রে খুবই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবেঃ  

(১) আঘাতের পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে বা কয়েকবার বমি করলে 

(২) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে 

 (৩) হাতে বা পায়ে আঘাতের পর পালস্ না পেলে(৬ঘন্টার মধ্যে টারশিয়ারি হাসপাতালে নিতে হবে) 

(৪)মেরুদণ্ড বা মাথায় বা ঘাড়ে অাঘাতের কারণে হাত পা অবশ বা প্যারালাইসিস হয়ে গেলে। 

(৫) কোন হাড় ভেংগে গেলে বা কোন জয়েন্ট অতিরিক্ত ফুলে গেলে বা স্বাভাবিক পসিশন হতে ছুটে গেলে।  

(৬) শরীরে ২০-৩০ ভাগের বেশি পুড়ে গেলে বি.দ্রঃ উপরের বক্তব্য গুলোই শুধুই সাধারণ সবাই যেন বুজতে পারেন এই ভাবে লেখার চেষ্টা করা।

 

 ডাঃ রিপন কুমার রায় 

জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ফেলো,নিউ দিল্লি,ইন্ডিয়া। 

ফেলোশীপ ইন ট্রমা সার্জারি,সিংগাপুর।

অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন, 

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), 

শেরে বাংলা নগর,ঢাকা। 

Tuesday, August 11, 2020

কক্সিডাইনিয়ার চিকিৎসাঃ মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার কারন ও প্রতিকার।

 

মেরুদণ্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে প্রচন্ড ব্যথা হলে এর কারণে কোনো শক্ত জায়গায় বসাও অসম্ভব হয়ে যায়। মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করা এই সমস্যাটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কক্সিডাইনিয়া বলে। কক্সিস আকৃতিতে সামনের দিকে কনকেভ বা অবতল লেন্সের মতো এবং পেছনের দিকে কনভেক্স বা উত্তল লেন্সের মতো। কক্সিস পেশি, লিগামেন্ট ও টেন্ডনের মাধ্যমে পায়ুপথের আশাপাশের অংশের স্ট্যাবিলিটি মেইনটেন করে এবং এর পায়ুপথের সংশ্লিষ্ট মাংসপেশিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। দুই পাশে ইসচিয়াল টিউবেরোসিটি এবং মাঝখানে কক্সিস শরীরের ওজন বহন করে। পেছনে ঝুঁকে বসলে কক্সিসের ওপর প্রেসার বেশি পড়ে এবং সামনে ঝুকলে প্রেসার কম পড়ে। তাই কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথায় রোগীরা সামনের দিকে ঝুঁকে বসে। পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয় এ সমস্যাটি।


কারনঃ 


- আঘাত জনিত কারণে বিশেষ করে পেছনের অংশ পড়ে গিয়ে সরাসরি আঘাত পেলে

- আনস্ট্যাবল কক্সিস থাকলে

- ডিসপ্লেসমেন্ট কক্সিস থাকলে

- প্রসবের সময় আঘাত বা ডেলিভারিতে দীর্ঘ সময় লাগলে

- সার্জারিজনিত সমস্যা 

- মিসএলাইন্ড, শক্ত বা লম্বা কক্সিস থাকলে

- রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা 

  বাইসাইকেল চালালে

- প্রসবের সময় আঘাত পেলে

- ইনফেকশন, ক্যালসিয়াম ডিপোজিশন এবং টিউমারের কারনে

- বাড়তি হাঁড়ের কারনেও এটি হতে পারে

- দীর্ঘদিন ধরে ককসিসে প্রদাহ থাকলে

- নারীদের ক্ষেত্রে প্রসবের সময় আঘাত বা প্রলংগড ডেলিভারি এর কারণে 

- পেশির সংকোচন, পাইলোনাইডাল সাইনাস, পাইলোনাইডাল সিস্ট, মেনিসকাল সিস্ট, রিপিটেটিভ স্ট্রেইন, যেমন- দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালালে

- অনেক সময় মেরুদন্ডে বা ককসিসে মেজর অপারেশন হলে

- গর্ভপাত হলে


লক্ষণঃ


- বসার সময় বা বসার পর ব্যথা অনুভূত হয়

- দীর্ঘক্ষণ বসলে ব্যথা বেড়ে যায়

- শক্ত জায়গায় বসা যায় না

- কখনও বসা থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা হয়

- আবার কখনও নরম জায়গায় বসলেও ব্যথা হয় পেছনে হেলান দিয়ে বসলে বেশি ব্যথা হয় কিন্তু সামনে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কম হয়

- গভীর ব্যথা হয় ককসিসের আশপাশে

- রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখতে হয়।

- মলত্যাগ করার সময় বা আগে ব্যথা হয়

- সহবাসের সময়ও ব্যথা হতে পারে

- কখনো কখনো কোমর ব্যথার সাথে ককসিডাইনিয়া  

  সম্পৃক্ত

- কোমরের একেবারে শেষ প্রান্তে ব্যথা অনুভূত হয়    

- বেশি সময় ধরে বসে থাকলে ব্যাথা তীব্র হয়

- কক্সিন ও কক্সিম সংলগ্ন স্থানে ব্যথা বেশি হয়

- কোমরের একেবারে শেষ প্রান্তে ব্যথা অনুভূত হয়

- সাইকেল চালানো বা এ রকম কোথাও বসলে যেখানে সরাসরি পশ্চাৎদেশে চাপ পড়ে, তাহলে ব্যথা বাড়ে

- কোষ্টকাঠিন্যের সময় ব্যথা বাড়ে


চিকিৎসাঃ


কক্সিডাইনিয়ায় আক্রান্ত হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।সঠিক চিকিৎসা মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 


- ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে 

  পারেন

- বসার স্থানে নরম হোল কুশন ব্যবহার করে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়

- ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করা। 


সেল্ফ কিছু ব্যয়াম যা এ সমস্যাটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ; প্রথমে যেটি করবেন


- লম্বা শ্বাস নিতে হবে নাক দিয়ে এর সঙ্গে তলপেট এবং প্রস্বাস করবার জন্য প্রয়োজনীয় মাংসগুলো শক্ত করে ভেতরের দিকে টেনে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এখাবে ১৫ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


-- প্রথমে একটি চেয়ারে বসুন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকুন। এবার প্রস্রাব ধরে রাখার জন্য দরকারি মাংসপেশিগুলো সংকুচিত করুন। এই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এবার সংকুচিত মাংসপেশি ছেড়ে দিন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৩ বার করুন।


-- একটি শক্ত বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার দুই হাঁটুর ফাঁকে একটি নরম বল বা বালিশ রেখে এতে চাপ দিন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন আর ছাড়ুন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন। 


-- সোজা চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার কোমর ওপরের দিকে ওঠান, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছাড়ুন। এটিও দিনে ৪ বেলা এবং ৫-৬ বার।


এছাড়াও একটি গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে ১০/১৫ মিনিট বসে থাকতে হবে।


কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার থেকে মুক্তির জন্য যে নিয়মকানুনগুলো মেনে চলবেনঃ


- মেরুদণ্ড এলিয়ে বসা যাবে না 

- সঠিকভাবে বসা, যাতে পশ্চাদেদশে বেশি চাপ না 

 পড়ে

- শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা

- নিয়মিত উপযুক্ত স্থেন্দিনিং ও পেশি শক্তিশালী  

  হওয়ার ব্যায়াম করা

- দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানো যাবে না

- শক্ত জায়গায় বসা থেকে বিরত থাকতে হবে

- বসার স্থানে কুশন ব্যবহার করে বসতে হবে

-হাড়ঁ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ১/২ টা ইনজেকশন নেয়া(অনেক ক্ষেত্রে একদম ভালো হয়ে যায়) 

দীর্ঘ দিন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, ঔষধ নেওয়া সত্ত্বেও যদি কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা না কমে সে ক্ষেত্রে কক্সিস সার্জারি করতে হবে।

শিশুর জিহবা জড়তা (Tongue Tie)

 শিশুর জিহবা জড়তা, বা টাং টাই (Tongue Tie), হলো একটি জন্মগত অবস্থা যেখানে শিশুর জিহবার নিচের অংশে একটি পাতলা টিস্যু (ফ্রেনুলাম) থাকে যা জিহ...