Thursday, August 20, 2020

মলদ্বারের ফিস্টুলা

 **মলদ্বারের ফিস্টুলা কি?***



Fistula in ano- মানে মলদ্বারের পাশে একধরনের নালী। যেখান দিয়ে কখনো পুঁজ, পানি, পচা রক্ত আবার কখনো মল ঝরতে পারে। কারো ক্ষেত্রে এটা সবসময় হয়। কারো ক্ষেত্রে কিছুদিন ভালো থাকে। তারপর হঠাৎ ফুলে যায়, ব্যথা হয়, জ্বর হতে পারে। ফোলাটা বাড়তে বাড়তে একসময় ফেটে যায়। ব্যথা কমে যায়। কিন্তু ময়লা ঝরতে থাকে। কারো ক্ষেত্রে সবসময় ময়লা ঝরে আবার কারো ক্ষেত্রে কিছুদিন ভালো থাকে। এই ভালো থাকার সময়টা কারো ক্ষেত্রে কয়েকদিন, কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে।

***মলদ্বারের ফিস্টুলা কেন হয়?**

মলদ্বারের পাশে কিছু গ্রন্থি থাকে। যেগুলো থেকে রস নিঃসৃত হয়ে পায়খানার রাস্তা পিচ্ছিল রাখে। ফলে সহজে পায়খানা হয়। কোন কারনে এই গ্রন্থিতে ইনফেকশন হলে মলদ্বারের পাশে ফুঁড়া হয়। পরবর্তীতে সেটা ফেটে গিয়ে একটা নালীর মত হয় সেটাকেই ফিস্টুলা বলা হয়।

**মলদ্বারের ফিস্টুলা কয় ধরনের?**

 

• Simple fistula(সাধারন ফিস্টুলা)-

o এটার চিকিৎসা সহজ।
o একবার সার্জারিতেই ভালো হয়ে যায়।

• Complex fistula(জটিল ফিস্টুলা)-

o চিকিৎসা জটিল।
o একাধিক সেটিং এ সার্জারি লাগতে পারে।
কি করব?

***মলদ্বারের ফিস্টুলা কি ভালো হয়?**

মলদ্বারের ফিস্টুলা খুবই common একটি মলদ্বারের সমস্যা। যারা এই রোগটিতে ভোগেন তাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি মাথায় ঘোরপাক খায় তা হচ্ছে এটা ভালো হয় কিনা? অথবা একবারে ভালো হয় কিনা? অনেকের মাঝে প্রচলিত ভুল ধারনা যে এই রোগ ভালো হয় না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। চিকিৎসায় এই রোগ পুরোপুরি ভালো হয়।

***মলদ্বারের ফিস্টুলার চিকিৎসা কি***

প্রথম কথা হল এটা ঔষধে ভালো হয় না। এর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারি। অনেক ধরনের ফিস্টুলা আছে। চিকিৎসা নির্ভর করে ফিস্টুলা এর প্রকারভেদের উপর। ফিস্টুলা রোগের কমপক্ষে ১৫- ২০ ধরনের সার্জারি আছে। সফলতা নির্ভর করে সঠিক রোগ নির্ণয় (ফিস্টুলার ধরন) ও সঠিক সার্জারির উপর। সাধারনত অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক settings এই ঠিক হয়ে যায়। তবে জটিল ফিস্টুলা হলে একের অধিক settings লাগতে পারে। যেটাকে বলা হয় Staged fistula surgery অর্থাৎ ধাপ বাই ধাপ সার্জারি। তবে অনেকেই নানা রকম প্রচারণায় প্রলুব্দ হয়ে অপচিকিৎসার শিকার হন। ভোগান্তি বাড়ে, জটিলতা বাড়ে। অনেক সময় এখানে cancer পর্যন্ত হতে পারে। তাই সময় থাকতে আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি, আর অপচিকিৎসাকে না বলি। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করি।

***মলদ্বারের ফিস্টুলার চিকিৎসা কোথায় করাবেনঃ

মলদ্বারের ফিস্টুলার চিকিৎসা ঠিকঠাক মতো না করতে পারলে বার বার হয়।
সুতরাং অবশ্যই একজন পায়ুপথের রোগ বিশেষজ্ঞ (কলোরেক্টাল সার্জন) সার্জনের দ্বারা ফিস্টুলার চিকিৎসা করাবেন...

 
                                                 DR. MD MAHMUDUL HASAN PANNU
                                  MBBS, BCS(Health), FCPS (Surgery), MS(Colorectal Surgery -Thesis)
                                                         COLORECTAL SURGEON
                                                   (পায়ুপথের রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন)
                                                                   BSMMU, Dhaka.

Friday, August 14, 2020

গোড়ালি ব্যথার কারন ও প্রতিকারঃ

 

পায়ের গোড়ালি ব্যথা হওয়ার বেশ কয়েকটি কারন রয়েছে। শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, গোড়ালির বায়োম্যাকানিক্স পরিবর্তন হলে কিংবা পায়ের কাফ মাসেল অস্বাভাবিক হলে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত পায়ের গোড়ালির হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হিল স্পার সমস্যাটি হয়। এটি পায়ের গোড়ালির নিচে সফট টিস্যু/মাংসপেশিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে হিল স্পার অর্থাৎ পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির রোগীদের তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এটিকে ক্লিনিক্যালি ক্যালকেনিয়াল স্পারও বলা হয়। এই সমস্যায় পায়ের ক্যালকেনিয়াস (Calcaneus) নামক হাড়ে খানিকটা বাড়তি হাড় তৈরি হয়, যার ফলে গোড়ালিতে ব্যথা করে। এ ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। 


মহিলাদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়, তবে যে কেউই যেকোন বয়সে হিল স্পার তথা ক্যালকেনিয়াল স্পারের কারনে গোড়ালির ব্যথায় ভুগতে পারেন।


আরেকটি সমস্যার কারনে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। এটিকে আমরা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস বলি। প্ল্যানটার ফ্যাসা হচ্ছে মাংসপেশির নিচে অবস্থিত একটি ঝিল্লি। এটিতে প্রদাহজনিত কারনে ব্যথা হতে পারে। ঘুম থেকে ওঠার পর পা ফেললে পুরো পায়ের পাতা কিংবা গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়।


হিল স্পার/ গোড়ালি ব্যথার কারনসমূহঃ


     -সব সময় শক্ত জুতা পরিধান করা। 

    - দীর্ঘদিন পায়ের মাংসপেশিতে টান লেগে থাকলে

    - গোড়ালির মাংসপেশি ছিড়ে গেলে

    - উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি হলে

     -পায়ের জন্মগত/ গঠনগত কিছু সমস্যার কারনে

     -উঁচু হিল পরলে।

     -অনেক সময় মাত্রারিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে।


গোড়ালি ব্যথার লক্ষণঃ


- পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হবে

  - গোড়ালি ফুলে যায়

  - গোড়ালি লাল এবং গরম অনুভব হয়

  - হাঁটা বা দৌঁড়ানোর সময় ব্যথা বেড়ে যায়

  - ঘুম থেকে উঠার পর পায়ের গোড়ালিতে সুঁচ ফোটার মত তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়


গোড়ালির ব্যথা এড়াতে করনীয়ঃ


   - স্বাভাবিকভাবে হাঁটা

   - শক্ত জায়গায় হাঁটা যাবেনা

   - শক্ত জুতা পায়ে দেয়া এড়াতে হবে

   - শরীরের ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

   - ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

   - এক পায়ে ভর দিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবেনা


গোড়ালির ব্যথার চিকিৎসাঃ


- নরম জুতা পরিধান করতে হবে। এমন জুতো ব্যবহার করতে হবে, যা গোড়ালিকে পায়ের আঙুলের থেকে কিছুটা উঁচুতে রাখবে। 


-ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। ইউরিক এসিড কমানোর ঔষধ খাওয়া যেতে পারে যদি ইউরিক এসিড বেশি থাকে 

- গোড়ালির নিচে দিনে তিন/চারবার আইস প্যাক ব্যবহার করবেন অথবা কুসুম গরম পানি বালতিতে নিয়ে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে -১৫ থেকে ২০ মিনিট। 

- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

- নরম ও আরামদায়ক ফ্ল্যাট স্যান্ডেল/ জুতো পরতে হবে।


Calcaneal Spur বা পায়ের গোড়ালি ব্যাথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। 

অনেক সময় অামরা চিকিৎসকরা দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে কিছু ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে থাকি যা ভালো উপকারে আসে এবং দ্রুত ব্যথা কমিয়ে দেয়।ইঞ্জেকশন আবশ্যিক ভাবে এক্সপার্ট এবং অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক এর মাধ্যমে দিতে হবে। ৭০-৯০ ভাগ রোগী দেখা যায় এতেই ভালো হয়ে যায়। ১০% রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন লাগতে পারে।


নিজস্ব (সেল্ফ) থেরাপিউটিক এক্সারসাইজঃ 


- একটি দেয়ালে দুই হাত দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যেন একটি পা সামনে সামান্য ভাঁজ হয়ে থাকে এবং আর একটি পা পেছনে সোজা করে থাকে। পিঠ সোজা রাখতে হবে এক্ষেত্রে। এরপর পেছনের পা টানটান করে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এভাবে ৮ থেকে ১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


- সিঁড়িতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গোড়ালি সিড়ির বাইরের অংশে রাখতে হবে। এরপর শরীরের ভর পায়ের গোড়ালিতে রাখতে হবে। এভাবে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে দৈনিক ৮-১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


- দিনে অন্তত দুই বার ২০/৩০ বার মিনিট করে 'টিপ টো' ব্যায়াম করতে হবে। অর্থাৎ পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোড়ালি উঁচু করে দাঁড়িয়ে আবার ফ্লোরের সাথে ফ্ল্যাট করে দাঁড়াতে হবে।


গোড়ালির ওপর চাপ কমাতে কিছু নিয়মকানুনঃ


- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পায়ের যেকোনো ব্যথা কমাতে এটি বেশ কার্যকর


- উঁচু হিলের ও শক্ত সোলের জুতা পরিহার করতে হবে


- নিচু বা মাঝারি হিলের জুতা ব্যবহার করতে হবে


- উপরে উল্লেখিত পায়ের সেল্ফ স্ট্রেচিং ব্যায়াম নিয়মিতভাবে করতে হবে


- এক পায়ে বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস পরিহার করুন।


ডাঃ রিপন কুমার রায় 

অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন,জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান, শেরেবাংলা নগর,ঢাকা।

জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ফেলো,নিউ দিল্লি,ইন্ডিয়া। 

ট্রমা সার্জারিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত,সিংগাপুর।

Thursday, August 13, 2020

ব্যথাঃ আমাদের করনীয়

 ব্যাথা না থাকলে কতই না ভালো হতো,আসলেই কি তাই?? 😊

ক্যানসার/ টিউমার এর রোগীদের শুরুর দিকে কোন ব্যাথাই থাকে না,বেশ কিছু দিন শরীরে বাসা বেধে যখন সমস্যার তৈরি করে দেখা যায় আর কিছুই করার নাই,অনেক সময় চলে গেছে। তাই যদি শুরুতেই ব্যাথা হতো, তবে আরও আগেই ডাক্তার এর কাছে যেতে পারতেন,আগেই ডায়াগনোসিস হতো,ঠিক না? এবার আসি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেন ব্যথা হয়? আঘাতের কারণে হতে পারে,ওজন বেশি হলে হতে পারে,একি পজিশন এ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করলে হতে পারে, ইনফেকশন হলে হতে পারে,শরীরের ভিতরের কোন অন্ত্র বা অরগ্যান এর প্রব্লেম হলেও হতে পারে, আরও অনেক কিছু। কারও কোমড় ব্যাথা হলে,যদি আঘাত না পায় প্রথমে এই চিন্তা মাথায় আসে কিডনির কিছু হলো না তো!!! কিন্তু ১০০ জনের কোমড় ব্যাথা হলে সেখানে ৯৯ জনেরই কিডনীর কোন জটিলতা থাকে না। ৯৮% লোকেরই কোন অপারেশন লাগে না।কিন্তু আমরা কি করি!!! একটা গ্রুপ ডাক্তার এর কাছে যাবেনই না,কারণ ডাক্তার ব্যাথার ওষুধ দিবেন,আর আপনার কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে!!! আর একটা গ্রুপ ৭ দিন ফারমেসি থেকে, ৭ দিন এই চেম্বার ওই চেম্বার করে ৬ মাস ১ বছর ধরে শুধু ব্যাথার ওষুধ খেয়েই যাবেন। আর এক গ্রুপ আমাদের মা,খালা,চাচী,দাদীরা যারা ১ মাস শুধু খেয়াল করে যাবেন কেন হাল্কা ব্যাথা হচ্ছে!! পরের মাসে বাসার লোকজন কে জানাবেন বলবেন আর কিছু দিন দেখি তার পর ডাক্তার এর কাছে যাবো,এভাবে যখন ৬ মাস চলে যাবে,আর উঠে দাড়াতে পারছেন না,৪ জন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। আর এক গ্রুপ ১ বছর আগে তো ব্যাথার জন্ন্য ডাক্তার এর কাছে গিয়েছিলাম ভালো হয়ে গিয়েছিল, আবার একি সমস্যা কয়েকদিন ওই ঔষধ গুলো খেয়েই দেখি না। আর এক গ্রুপ প্রতিবেশির প্রেস্ক্রিপশন দেখে ঔষধ খান,মনে করেন ওনার সমস্যা তো আমার মতোই,খেয়েই দেখি না ঔষধ গুলো। আর এক গ্রুপ ডাক্তার এর কাছে যেয়ে বলবেন কোন টেস্ট করাবো না,এমনি ঔষধ লিখে দেন। আর এক গ্রুপ এসে বলবেন আমাকে কিন্তু ব্যাথার কোন ঔষধ দিবেন না,শুনেছি কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। এই ধরনের কারোই ব্যথা ভালো হবে না বা আপনি যথেষ্ট সচেতন না.... প্রথম ধাপে আঘাত জনিত ব্যথায় করনীয় নিয়ে অালোচনা করছি.. 

💢 অাঘাত জনিত ব্যথায় আপনার করনীয় কিঃ  

(১)প্রথমেই ঘাবড়ে যাবেন না,আঘাতের ধরনটা নির্নয় করুন। যদি অাঘাতের পরও হাটা চলা করতে পারছেন,অাঘাতের অাশে পাশের জয়েন্ট কোন সমস্যা ছাড়াই নাড়াতে পারছেন তা হলে বুঝতে হবে অাঘাত তেমন জটিল না,এ ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা তেই ভালো হবার সম্ভাবনা বেশি। 

(২) যদি আঘাতের তীব্রতা অনেক বেশি হয় এবং আঘাতের পরে আপনি হাটা চলা করতে পারছেন না বা আশেপাশের জয়েন্ট এ অনেক ব্যথা এবং অনেক বেশি ফুলে গেছে তবে আপনার অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে বা জরুরী বিভাগে যেতে হবে।  

(৩)আঘাতের কারণে যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন,অথবা বমি হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় অথবা অনেক বেশি পরিমানে রক্ত ক্ষরন হয় তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।  

(৪)যে কোন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা বা অগ্নি কান্ডের ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।    

(৫) গাছ থেকে পড়ে যাওয়া বা যেকোনো বিল্ডিং থেকে পড়ে গেলেও হাসপাতালে নিতে হবে। (৬) যদি মনে হয় হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে তবে,আক্রান্ত স্থান যতটা পারা যায় কম মুভমেন্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যান I  

➽ অল্প আঘাতে বাসায় কি করবেনঃ  

(১) আঘাত প্রাপ্ত জায়গায় বরফ/আইস দিন  

(২) আঘাত প্রাপ্ত জায়গা টা রেস্ট এ রাখুন-হাতে হলে একটা এলবো ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন আর পায়ে হলে একটা বালিশ দিয়ে পা টা উঁচুতে রাখুন।কোমড় ব্যথায় সামনে ঝুকে যেসব কাজ করে কয়েক দিন সেসব না করুন। 

 (৩) অল্প ব্যথায় প্যারাসিটামল ট্যাবলেট অার বেশি ব্যথা হলে রোলাক ট্যাবলেট খেতে পারেন। (৪) ২/৩ দিনের মধ্যে না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। 

অনেক বেশি অাঘাত বা সিরিয়াস ইঞ্জুরি হলে করনীয়ঃ 

(১) দ্রুত সাহায্যের জন্য আশেপাশের লোকদের ডাকুন বা সাহায্য নিন। 

(২) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে কাপড় বা প্রেসার ব্যান্ডেজ দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিন(মনে রাখবেন শরীরের ৩০ ভাগ রক্তক্ষরণ হলে সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তি শকে/ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন) 

(৩)আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক আছে কিনা খেয়াল করুন(এ ক্ষেত্রে ইউটিউব দেখে শিখে নিতে পারেন কিভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা যায়।) 

 (৪) অাঘাত প্রাপ্ত জায়গায় রেস্টে রাখার জন্য এলবো ব্যাগ পায়ের ক্ষেত্রে স্লিং,কোমড়ের জন্য লাম্বার করসেট, ঘাড়ের ক্ষেত্রে সারভাইকাল কলার ব্যবহার করুন(এগুলো রোগীকে হাসপাতালে নেয়া পর্যন্ত অার কোন অাঘাত হতে রক্ষা করবে এবং ব্যথা কমাবে) 

(৫)যদি হাসপাতাল একটু দূরে হয় তবে আশে পাশে কোথাও হতে অন্তত একটা স্যালাইন লাগিয়ে নিন ও একটা ব্যথার ইঞ্জেকশন বা সাপোজিটরি দিন। 

➽ যেসব ক্ষেত্রে খুবই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবেঃ  

(১) আঘাতের পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে বা কয়েকবার বমি করলে 

(২) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে 

 (৩) হাতে বা পায়ে আঘাতের পর পালস্ না পেলে(৬ঘন্টার মধ্যে টারশিয়ারি হাসপাতালে নিতে হবে) 

(৪)মেরুদণ্ড বা মাথায় বা ঘাড়ে অাঘাতের কারণে হাত পা অবশ বা প্যারালাইসিস হয়ে গেলে। 

(৫) কোন হাড় ভেংগে গেলে বা কোন জয়েন্ট অতিরিক্ত ফুলে গেলে বা স্বাভাবিক পসিশন হতে ছুটে গেলে।  

(৬) শরীরে ২০-৩০ ভাগের বেশি পুড়ে গেলে বি.দ্রঃ উপরের বক্তব্য গুলোই শুধুই সাধারণ সবাই যেন বুজতে পারেন এই ভাবে লেখার চেষ্টা করা।

 

 ডাঃ রিপন কুমার রায় 

জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ফেলো,নিউ দিল্লি,ইন্ডিয়া। 

ফেলোশীপ ইন ট্রমা সার্জারি,সিংগাপুর।

অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন, 

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), 

শেরে বাংলা নগর,ঢাকা। 

Tuesday, August 11, 2020

কক্সিডাইনিয়ার চিকিৎসাঃ মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার কারন ও প্রতিকার।

 

মেরুদণ্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে প্রচন্ড ব্যথা হলে এর কারণে কোনো শক্ত জায়গায় বসাও অসম্ভব হয়ে যায়। মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করা এই সমস্যাটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কক্সিডাইনিয়া বলে। কক্সিস আকৃতিতে সামনের দিকে কনকেভ বা অবতল লেন্সের মতো এবং পেছনের দিকে কনভেক্স বা উত্তল লেন্সের মতো। কক্সিস পেশি, লিগামেন্ট ও টেন্ডনের মাধ্যমে পায়ুপথের আশাপাশের অংশের স্ট্যাবিলিটি মেইনটেন করে এবং এর পায়ুপথের সংশ্লিষ্ট মাংসপেশিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। দুই পাশে ইসচিয়াল টিউবেরোসিটি এবং মাঝখানে কক্সিস শরীরের ওজন বহন করে। পেছনে ঝুঁকে বসলে কক্সিসের ওপর প্রেসার বেশি পড়ে এবং সামনে ঝুকলে প্রেসার কম পড়ে। তাই কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথায় রোগীরা সামনের দিকে ঝুঁকে বসে। পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয় এ সমস্যাটি।


কারনঃ 


- আঘাত জনিত কারণে বিশেষ করে পেছনের অংশ পড়ে গিয়ে সরাসরি আঘাত পেলে

- আনস্ট্যাবল কক্সিস থাকলে

- ডিসপ্লেসমেন্ট কক্সিস থাকলে

- প্রসবের সময় আঘাত বা ডেলিভারিতে দীর্ঘ সময় লাগলে

- সার্জারিজনিত সমস্যা 

- মিসএলাইন্ড, শক্ত বা লম্বা কক্সিস থাকলে

- রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা 

  বাইসাইকেল চালালে

- প্রসবের সময় আঘাত পেলে

- ইনফেকশন, ক্যালসিয়াম ডিপোজিশন এবং টিউমারের কারনে

- বাড়তি হাঁড়ের কারনেও এটি হতে পারে

- দীর্ঘদিন ধরে ককসিসে প্রদাহ থাকলে

- নারীদের ক্ষেত্রে প্রসবের সময় আঘাত বা প্রলংগড ডেলিভারি এর কারণে 

- পেশির সংকোচন, পাইলোনাইডাল সাইনাস, পাইলোনাইডাল সিস্ট, মেনিসকাল সিস্ট, রিপিটেটিভ স্ট্রেইন, যেমন- দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালালে

- অনেক সময় মেরুদন্ডে বা ককসিসে মেজর অপারেশন হলে

- গর্ভপাত হলে


লক্ষণঃ


- বসার সময় বা বসার পর ব্যথা অনুভূত হয়

- দীর্ঘক্ষণ বসলে ব্যথা বেড়ে যায়

- শক্ত জায়গায় বসা যায় না

- কখনও বসা থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা হয়

- আবার কখনও নরম জায়গায় বসলেও ব্যথা হয় পেছনে হেলান দিয়ে বসলে বেশি ব্যথা হয় কিন্তু সামনে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কম হয়

- গভীর ব্যথা হয় ককসিসের আশপাশে

- রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখতে হয়।

- মলত্যাগ করার সময় বা আগে ব্যথা হয়

- সহবাসের সময়ও ব্যথা হতে পারে

- কখনো কখনো কোমর ব্যথার সাথে ককসিডাইনিয়া  

  সম্পৃক্ত

- কোমরের একেবারে শেষ প্রান্তে ব্যথা অনুভূত হয়    

- বেশি সময় ধরে বসে থাকলে ব্যাথা তীব্র হয়

- কক্সিন ও কক্সিম সংলগ্ন স্থানে ব্যথা বেশি হয়

- কোমরের একেবারে শেষ প্রান্তে ব্যথা অনুভূত হয়

- সাইকেল চালানো বা এ রকম কোথাও বসলে যেখানে সরাসরি পশ্চাৎদেশে চাপ পড়ে, তাহলে ব্যথা বাড়ে

- কোষ্টকাঠিন্যের সময় ব্যথা বাড়ে


চিকিৎসাঃ


কক্সিডাইনিয়ায় আক্রান্ত হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।সঠিক চিকিৎসা মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 


- ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে 

  পারেন

- বসার স্থানে নরম হোল কুশন ব্যবহার করে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়

- ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করা। 


সেল্ফ কিছু ব্যয়াম যা এ সমস্যাটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ; প্রথমে যেটি করবেন


- লম্বা শ্বাস নিতে হবে নাক দিয়ে এর সঙ্গে তলপেট এবং প্রস্বাস করবার জন্য প্রয়োজনীয় মাংসগুলো শক্ত করে ভেতরের দিকে টেনে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এখাবে ১৫ বার, দৈনিক ৩ বেলা।


-- প্রথমে একটি চেয়ারে বসুন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকুন। এবার প্রস্রাব ধরে রাখার জন্য দরকারি মাংসপেশিগুলো সংকুচিত করুন। এই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এবার সংকুচিত মাংসপেশি ছেড়ে দিন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৩ বার করুন।


-- একটি শক্ত বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার দুই হাঁটুর ফাঁকে একটি নরম বল বা বালিশ রেখে এতে চাপ দিন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন আর ছাড়ুন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন। 


-- সোজা চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার কোমর ওপরের দিকে ওঠান, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছাড়ুন। এটিও দিনে ৪ বেলা এবং ৫-৬ বার।


এছাড়াও একটি গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে ১০/১৫ মিনিট বসে থাকতে হবে।


কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার থেকে মুক্তির জন্য যে নিয়মকানুনগুলো মেনে চলবেনঃ


- মেরুদণ্ড এলিয়ে বসা যাবে না 

- সঠিকভাবে বসা, যাতে পশ্চাদেদশে বেশি চাপ না 

 পড়ে

- শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা

- নিয়মিত উপযুক্ত স্থেন্দিনিং ও পেশি শক্তিশালী  

  হওয়ার ব্যায়াম করা

- দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানো যাবে না

- শক্ত জায়গায় বসা থেকে বিরত থাকতে হবে

- বসার স্থানে কুশন ব্যবহার করে বসতে হবে

-হাড়ঁ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ১/২ টা ইনজেকশন নেয়া(অনেক ক্ষেত্রে একদম ভালো হয়ে যায়) 

দীর্ঘ দিন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, ঔষধ নেওয়া সত্ত্বেও যদি কক্সিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা না কমে সে ক্ষেত্রে কক্সিস সার্জারি করতে হবে।

Thursday, August 6, 2020

শিশুর স্থুলতা : অভিভাবকদের করনীয়

 শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হওয়াকেই স্থুলতা বলে। শিশুদের স্থুলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। উন্নত বিশ্বে এটা আরও ভয়াবহ। স্থুলতা ও অতিরিক্ত ওজন এটা কিন্তু এক না। অতিরিক্ত ওজন হলো শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী যদি ওজন বেশি হয়।শিশুদের স্থুলতা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে এটা পরিণত বয়সেও স্থুলতায় রুপান্ত‌রিত হয়।


☆ শিশুদের স্থুলতার কারনে কি কি সমস্যা হতে পারে?
▪︎ডায়াবেটিস (টাইপ ২)
▪︎ শুয়ে থাকা অবস্থায় শ্বাসকষ্ট
▪︎ হাপানী
▪︎ গলায় কালো দাগ হয়ে যাওয়া
▪︎ কাজে অনীহা
▪︎উচ্চ রক্তচাপ
▪︎ হাড় ভেঙ্গে যাওয়া
▪︎ পিওথলিতে পাথর

☆ স্থুলতার কারন :
▪︎অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া
▪︎ খেলাধুলা কম করা
▪︎ কায়িক পরিশ্রম কম করা
▪︎মোবাইল ও কম্পিউটার এ অতিরিক্ত গেমস্ খেলা
▪︎ হরমোন - থাইরয়েড হরমোন কম থাকলে
▪︎ সময় মতো খাওয়া দাওয়া না করলে
▪︎পরিমিত ঘুম না হলে এবং সময় মতো না ঘুমালে

☆ স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজন বোঝার উপায়ঃ
BMI ( Body mass index ) পরিমাপ করে আমরা স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজন হিসাব করতে পারি। BMI একজনের ওজনকে তার উচ্চতা দিয়ে ভাগ করে পরিমাপ করা হয়। অতিরিক্ত ওজন তখন বলবো যখন BMI 85th - 95th পার্সেন্টাইল এর মধ্যে থাকে। আর যদি BMI 95th পার্সেন্টাইল এর বেশি বা সমান হয় তখন তাকে স্থুলতা বুঝায়।

☆ আমাদের করনীয় বা আমরা কি করতে পারি :
১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
▪︎শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাবার কম খাবে
▪︎ ফাস্টফুড এড়িয়ে চলবে
▪︎ শাকসবজি , ফলমূল, পানি বেশি খেতে হবে

২. কায়িক শ্রম বাড়াতে হবে
▪︎ হেটে স্কুলে যেতে পারে
▪︎ খেলাধূলা বেশি করে করবে
▪︎ পারলে হালকা ব্যায়াম করবে

৩. অনেক সময় ধরে মোবাইল বা কম্পিউটার গেমস পরিহার করতে হবে।

৪. ঘুমের সময় নির্ধারন করতে হবে। অসময়ে ঘুম বা কম ঘুমের কারনে স্থুলতা হয়। ৩-৫ বছরের বাচ্চাদের ১০- ১৩ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।

৫. খাবারের সময় বজায় রাখতে হবে। খাবার সময়মতো না খেলে ওজন বাড়তে পারে।

ডাঃ নাজমুল ইসলাম
রেজিস্টার
শিশু সার্জারী বিভাগ
ঢাকা শিশু হাসপাতাল 

গরুর শরীরে কম চর্বিযুক্ত অঞ্চল নির্বাচন



আমার কি জানি গরুর মাংসের কোন অংশে সবচেয়ে কম চর্বি থাকে অর্থাৎ কম চর্বিযুক্ত অঞ্চল কোনটি?

যাদের হার্টের সমস্যা আছে বা আর্টারিতে ব্লক আছে বা রিং পরানো আছে অথবা অনেক বেশি কোলেস্টেরল বা ইউরিক অ্যাসিড অনেক বেশি বা কিডনির সমস্যা অর্থাৎ ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেশি । যাদের একদমই গরুর মাংস রেস্ট্রিক্টেড করে দেয়া হয়েছে। তারা যদি খেতে চান তাহলে অবশ্যই সঠিক অঞ্চল নির্বাচন করে গরুর মাংস খাবেন। সবচেয়ে কম চর্বিযুক্ত অঞ্চল হচ্ছে Round ও Sirloin অংশ।তবে গ্রহণের পূর্বে আপনার যদি কোন সমস্যা থাকে অবশ্যই ডাক্তার অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী তারপরে গ্রহণ করবেন। আর কখনোই দুই টুকরার বেশি খাওয়া যাবে না।

কিন্তু যারা কোন রোগ গ্রস্থ না মোটামুটি সুস্থ তারা যদি বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হই এবং কম চর্বিযুক্ত অঞ্চল থেকে মাংস খাওয়া পছন্দ করি তাহলে ওই দুইটি অংশ নির্বাচন করতে পারি। আর দৃশ্যমান যত চর্বি থাকে অর্থাৎ বাইরের যে সাদা চর্বিযুক্ত এরিয়া সেটা মাংস থেকে একদম ফেলে দিতে হবে।


এখন প্রশ্ন হলো কতটুকু গ্রহণ করাটা সমীচীন?

মোটামুটি সব গাইডলাইন এই একই ধরনের তথ্য সেটি হচ্ছে 3 আউন্স বা 85 থেকে 90 গ্রাম। যেটা আনুমানিক একটা মাউস বা একটা মিডিয়াম সাইজের মোবাইলের সমান বা তাসের বান্ডিলের সাইজ আর যদি ছোট ছোট পিস হয় দেড় ইঞ্চি বাই দেড় ইঞ্চি তাহলে তিন টুকরা।

একাধারে সর্বোচ্চ তিন দিন পর্যন্ত মাংস খাওয়া যেতে পারে।

সবচেয়ে ভালো হচ্ছে দুই তিন টুকরো মাংস, অনেক সালাদ, একটি কাঁচামরিচ, এক টুকরো লেবু এভাবে করে প্লেটিং করলে তাহলে মাংসের পরিমাণ বেশি গ্রহণ করা হবে না।

আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাংস রান্না করতে পারি। যেমন- মাংসের সাথে বিভিন্ন রকমের সবজি যেমন কাঁচা পেঁপে, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, জালি কুমড়া, লাউ ,মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সংযোগ করে রান্না করতে পারি। এতে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ টা কিছুটা ব্যালেন্স হয়ে যায়। এছাড়াও মাংস দিয়ে সালাদ করা যেতে পারে।

কাঁচা গরুর মাংসের প্যাকেজিং এমনভাবে করা উচিত যেটা একটা পরিবারের একদিনের খাবারের সমান হয় অর্থাৎ ছোটো ছোটো প্যাক করে করে ডিপ ফ্রিজে রাখা উচিত। ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা -15 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -24 ডিগ্রি সেলসিয়াস করা উচিত তাহলে পাঁচ ছয় মাস অনায়াসে মাংস খাওয়া যায়। যদি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ডিপ ফ্রিজ হয়, তবে এক বছর পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে। আর নরমাল ফ্রিজে রান্না করা মাংস সর্বোচ্চ তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়া যেতে পারে। তবে আদর্শ হচ্ছে দুই দিন খাওয়া।

গরুর মাংস প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,আয়রন,বি ভিটামিনের মোটামুটি সবগুলোই এবং অন্যান্য অনেক খনিজ উপাদান আছে যা প্রত্যেকটি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। যদি কেউ কম পরিমাণ খাবার গ্রহণ করে বেশি পুষ্টি পেতে চান, তাহলে গরুর মাংসের বিকল্প নাই। তবে অবশ্যই সেটি সঠিক নিয়মে সঠিক পদ্ধতিতে জেনে এবং সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। এটি বর্ধনশীল বাচ্চাদের জন্য একটি উত্তম খাবার। সহজ ভাবে বলি কেন আদর্শ খাবার, 3 আউন্স গরুর মাংসে যে পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায় সেই পরিমাণ আয়রন পেতে মুরগির ব্রেস্ট এর 9 আউন্স প্রয়োজন আবার 3 আউন্স গরুর মাংসের থেকে যে পরিমাণ জিংক পাওয়া যায় সেই পরিমাণ জিংক পেতে হলে 20 আউন্স মুরগির ব্রেস্ট প্রয়োজন।

আরো অনেক তথ্য বাকি আছে গরুর মাংস সম্বন্ধে সেগুলো জানাবো ইনশাআল্লাহ।

ধন্যবাদ সবাইকে। সবাইকে আবারো "ঈদ মোবারক"।

Fatim Tuj Zuhura
Nutrition Consultant
Marine Health Care
Khilkhet Dhaka

Wednesday, August 5, 2020

☆ করোনাভাইরাস : ঘরে শিশুর যত্ন ☆

 করোনা নিয়ে বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। দিন দিন বাড়ছে করোনা রুগির সংখ্যা। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের বাড়ছে দূচিন্তা। আপাতত স্কুল কলেজ বন্ধ আছে, শিশুরা ঘরেই অবস্থান করছে। ফলে শিশুরা সহপাঠী এবং বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা ও সময় কাটাতে পারছেনা। এজন্য এইসময় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। শিশুদের ঘরোয়াভাবে কিভাবে যত্ন নিতে পারি তার কিছু টিপস দেওয়া হলঃ

১)করোনা ভাইরাস সম্পর্কে শিশুকে সঠিক ধারনা দিন।এটা একটা ভাইরাস, এটা মানবদেহ খুব ছোঁয়াচে রোগ করে যা একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। কেন আমাদের সবাইকে ঘরে থাকতে হবে ? ঘরের বাহিরে গেলে কি সমস্যা হতে পারে?

২) শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এসময় বাবা - মা সন্তানের পড়াগুলো দেখিয়ে দিতে পারে। পড়াশোনার একটা রুটিন করে দিতে পারেন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ার টার্গেট করে দিতে পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়া শেষ করতে পারলে তাকে পুরস্কার দিবেন এভাবে তাকে পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করতে পারেন।

৩) শিশুকে নিয়ে টেলিভিশন এ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, কার্টুন দেখতে পারেন। শিশুকে গল্প বা কবিতা শোনাতে পারেন। কিছু ইনডোর গেমস আছে যেমনঃ কেরাম, লুডু ইত্যাদি খেলতে পারেন। তবে বেশি সময় নিয়ে টেলিভিশন দেখানো যাবেনা। তাহলে আবার আসক্তি হতে পারে। টেলিভিশন দেখার সময় বাচ্চাদের ছোট ছোট প্রশ্নের উওর দিন।

৪) শিশুকে গঠনমূলক কাজের ধারনা দিন। বাসার ছোট ছোট কাজগুলো করাতে পারেন। বাবা - মা যখন কাজ করে তখন কাজে সাহায্য করতে পারে। কাজের লোক যখন থাকবেনা তখন কিভাবে চলতে হয় সেই শিক্ষা দিন।

৫) পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিশুকে ধারনা দিন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অংগ। কিভাবে হাত ধূবে, কত সময় নিয়ে ধূবে, হাঁচি কাশির সময় কিভাবে শিষ্টাচার মেনে চলবে, হাঁচি কাশির পর কিভাবে টিস্যু ব্যবহার করবে, টিস্যু ব্যবহারের পর সেটা কিভাবে ডাস্টবিনে ফেলবে, লিফট ব্যবহার করলে লিফলেট বাটন কিভাবে চাপবে ও কিভাবে দুরত্ত্ব বজায় রেখে দাঁড়াবে এগুলোর সঠিক ধারনা দিন। বার বার হাত ধোবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নাক, মুখে এবং চোখে যেন বার বার হাত না দেয় সেই শিক্ষা দিন।

৬) বাড়িতে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে, শিশুদের কে অসুস্থ ব্যক্তি হতে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে অসুস্থ ব্যক্তিকে আলাদা রুমে রাখুন।

৭) এসময় শিশুর খাবারের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন। একই ধরনের খাবার যেন প্রতিদিন না খাওয়ানো হয়। খাবারের ভিন্নতা আনেন। শিশুকে পরিমিত খাওয়াতে শেখান। বেশি বেশি ভিটামিন - সি, জিঙ্ক ও আয়রন যুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, কোমল পানীয় এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

৮) শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করুন। এখন মোটামুটি সব ডাক্তারই ফোনে ফোনে চিকিৎসা দিচ্ছে। প্রথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর যদি ভাল না হয়, যদি ডাক্তার স্বশরীরে দেখতে চায় অথবা অতিপ্রয়োজনীয় হলেই কেবল ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যান।

ডাঃ নাজমুল ইসলাম
রেজিস্টার
শিশু সার্জারি বিভাগ
ঢাকা শিশু হাসপাতাল।